বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন । বিয়ের মাধ্যমে দুইজন নারী – পুরুষ একে অপরের সাথে এক পবিত্র বন্ধনে মিলিত হয় । অগ্নি সাক্ষী রেখে আগামী সাত জন্ম একে অপরের সঙ্গী হবার অঙ্গীকারবদ্ধ হয় । বিয়ের আগে ঠিকুজী, রাশি অনেক কিছুই মিলিয়ে দেখা হয় আগামী দিনে বর-কনের বনিবনা কেমন হবে দেখার জন্য । কিন্তু বিয়ের আগে যেটি সবচেয়ে আগে করা দরকার, সেই মেডিক্যাল টেস্টগুলি মানুষ সবার আগে ভুলে যায় বা অবহেলা করে । কিন্তু  বিয়ের আগে মেডিক্যাল টেস্ট করানো কিন্তু মাস্ট। কারণ যে মানুষটার সাথে থাকতে যাচ্ছেন সারাটা জীবন, তার বা আপনার কোনো শারীরিক অসুবিধা আছে কিনা, যার ফলে আপনি আর আপনার পার্টনার এবং আপনাদের সন্তান সমস্যায় পড়তে পারে, তার জন্যেই মেডিক্যাল টেস্ট করানো খুব দরকার।এক নজরে দেখে নিন কি কি মেডিক্যাল টেস্ট অবশ্যই করা উচিত বিয়ের আগে ?

প্রথমত, ব্লাড টেস্ট । বিয়ে মানে কেবল মাত্র দুইজন মানুষের মধ্যে বন্ধন নয়, আগামী দিনে নতুন প্রানের সঞ্চারের প্রথম পদক্ষেপ এই বিয়ে । কিন্তু রক্তে কোনোরকম ডিসঅর্ডার  জন্মানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। রক্তবাহিত রোগ, যেমন হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি যদি আপনাদের কারুর একজনের থেকে থাকে, তাহলে সন্তান কিন্তু জন্ম থেকেই ওই রোগের বাহক হয়ে জন্মায়। আর নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের মেয়ে যদি পজিটিভ ব্লাড গ্রুপের ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে ব্লাড গ্রুপ ইনকমপ্যাটিবিলিটি তৈরি হয় যা খুবই সমস্যার। তাই বিয়ের আগে ভালো করে ব্লাড টেস্ট অবশ্যই করানো উচিত ।

দ্বিতীয়ত, HIV টেস্ট ।  বিয়ের আগে HIV এবং অন্য কোনো সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিসিসেজ (STD), যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস, ওয়ার্টস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস আছে কিনা আপনার বা আপনার পার্টনারের এটা টেস্ট করা উচিত ।  গনোরিয়া, সিফিলিস, ওয়ার্টস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো হয়, তবে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু HIV-র ক্ষেত্রে সেটা হয় না। এমনকি যদি কোনো একজনের এই রোগ থাকে, তাহলে সেক্সের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরেও চলে যেতে পারে, এবং সন্তান হলে সেক্ষেত্রেও এই রোগ তার মধ্যে বাহিত হয়।

তৃতীয়ত, জেনেটিক টেস্ট । জেনেটিক কোনো ডিসঅর্ডার কিন্তু এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সংক্রামিত হয়। তাই বিয়ের আগে জেনেটিক টেস্ট করা খুবই জরুরী। আপনার বা আপনার পার্টনারের যদি সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার থেকে থাকে, তাহলে সন্তানেরও তা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমনকি আপনাদের পরিবারের কারুর এই রোগ থেকে থাকলেও তা সন্তানের হতে পারে। তাই বিয়ের আগে দুই পরিবারেরই মেডিক্যাল হিস্ট্রি জেনে নিন।

চতুর্থত,  ফার্টিলিটি টেস্ট । যতই চিকিৎসা পদ্ধতি আধুনিক হোক না কেন, স্বীকার করতেই হবে বন্ধ্যাত্ব সমস্যা কিন্তু এখন বাড়ছে। আর আমাদের দেশে জানেনই, এখনও সন্তান আসতে কোনো সমস্যা হলে দোষ দেওয়া হয় মেয়েটিকেই। বিয়ের আগে ফার্টিলিটি টেস্ট করার চল আমাদের দেশে সেভাবে না হলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে সচেতনতা দেখা দিয়েছে। বিবাহিত জীবনের ক্ষেত্রে সন্তান কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিয়ের আগে আপনাদের দু’জনেরই উচিত এই ফার্টিলিটি টেস্ট করা। পুরুষের ফার্টিলিটি চেক করার জন্য সিমেন টেস্ট আর মেয়েদের জন্য ওভিউলেশন টেস্ট করানো হয়। আর আপনার জননতন্ত্রে কোনো জেনেটিক অ্যাবনর্মালিটি আছে কিনা তা দেখার জন্য পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করানো দরকার। তাছাড়া প্রোল্যাক্টিন, FSH,  LH, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোনের পরীক্ষা করতে ভুলবেন না।

এছাড়া  সিকল সেল জিন টেস্ট করানো উচিত । লোহিত রক্তকণিকার একধরণের ক্রনিক আর দুর্বল অবস্থা হল সিকল সেল ডিজিস। এই রোগে লোহিত রক্তকণিকার কোষগুলি কাস্তের মতো দেখতে হয়, আর সূক্ষ্ম রক্তবাহের মধ্যে দিয়ে কোষ এবং কলায় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। তাই ছেলে বা মেয়ের কারো যদি সিকল সেল জিন থেকে থাকে, তাহলে সতর্ক হওয়া ভাল ।  কারন, এক্ষেত্রে যদি একজন সিকল সেলের বাহক হন, তাহলে ৫০% সম্ভাবনা থাকে বাচ্চাটিরও সিকল সেলের রোগী হওয়ার।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.