বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ পৃথিবীতে এমন কিছু রহস্যময় জায়গা রয়েছে যার রহস্যের সমাধান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার প্রসিদ্ধ মহাপীঠ তারাপীঠের নাম শোনেননি এমন হয়তো কেউ নেই। প্রতিদিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে এই তীর্থস্থানে। এই মন্দির রয়েছে অলৌকিক রহস্য যা সাধারণ মানুষের চিন্তার বাইরে ।

মহাপীঠ তারাপীঠ একটি শক্তি পীঠ । তবে মহাপীঠ তারাপীঠকে অনেকে শক্তি পীঠ বলে নারাজ। এই জাগ্রত মন্দিরের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বেশকিছু মতবাদ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্যটি হলো শক্তিপীঠ অর্থাৎ একান্নটি সতী পীঠের অন্যতম হলো এই মহাপীঠ তারাপীঠ ।

দক্ষ যজ্ঞে সতী দেহত্যাগ করলে মহাদেব শিব তাঁর পবিত্র দেহ কাঁধে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরতে থাকেন । শিবের প্রলয় নাচনে পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলুপ্তের পথে যাবার দশা হয়। এমন সময় শ্রী বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রের সাহায্যে সতীর দেহ মোট একান্ন খণ্ডে বিভক্ত করেন । কথিত আছে, দেবী সতীর তৃতীয় নয়ন অর্থাৎ নয়ন তারা এই গ্রামে পতিত হয়। পরে সেই প্রস্তরে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ঋষি বশিষ্ঠ মায়ের এই রূপটি প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন  এবং সতীকে মা তারা রূপে পূজা করেছিলেন ।

আবার অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সমুদ্রমন্থনের সময় যখন মহাদেব হলাহল বিষ পান করেছিলেন,  তখন সেই ভয়ানক বিষের প্রভাবে মহাদেব খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন, সেই সময় দেবী তারা  সেসময় তাঁর স্তন সুধা পান করিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের জ্বালা নিবারণ করেছিলেন । বিভিন্ন পীঠস্থান গুলির মধ্যে তারাপিঠ হল অন্যতম সিদ্ধ পীঠ । কথিত আছে এখানে সাধনা করলে সাধক অসীম জ্ঞান,  আনন্দ এবং সিদ্ধি  তথা অলৌকিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হন ।

সর্বোপরি দিব্যপুরুষ  সাধক বামাক্ষ্যাপাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য প্রসিদ্ধ কাহিনী। বীরভূমের প্রধান তীর্থস্থান তারাপীঠ আজ আন্তর্জাতিক কৌতূহলের কেন্দ্রভূমি । রহস্যের পর রহস্য আবৃত রেখেছে এই  শক্তিপীঠকে। তবে পুরাণাদি গ্রন্থের তারাপীঠ কে শক্তিপীঠ বা সতী পীঠ বলা হয়নি । তাই এই নিয়ে রয়েছে বেশ দ্বন্দ্ব ।

মহাপীঠ তারাপীঠের  মহিমা অন্যান্য শক্তিপীঠ থেকে একেবারেই ভিন্ন । দশ মহাবিদ্যাতেও বিশেষ স্থান পেয়েছেন দেবী  তারা । তারারহস্য এবং অন্যান্য তন্ত্রের গ্রন্থ পাঠ করলে বোঝা যাবে,  দেবীর পৌরাণিক রহস্য কি ? তারাপীঠ মন্দিরের স্থাপত্য খবুই সাধারন প্রকৃতির । কিন্তু সাধারণের মধ্যে কোথাও যেন লুকিয়ে রয়েছে রহস্যের ছোঁয়া । চালা ডিজাইনের এই মন্দির বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে ব্যক্ত করে ।

মহাপীঠ তারাপীঠের এই মন্দিরের ভেতরের দেওয়াল বেশ মোটা। মন্দিরের উত্তর দিকে খিলানের উপর কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঘটনা,  ভীষ্মের শরশয্যাসহ  মহাভারতের যুদ্ধের কাহিনীর চিত্র দেখা যায়। তারা মায়ের শিলারূপ  ঢাকা থাকে একটি আচ্ছাদনে । সেই আচ্ছাদনকেই মাতৃরূপের প্রতীক ধরা হয়। এই মূর্তি তারা মায়ের মূর্তি হিসাবে আজও ঘরে ঘরে পুজিতা ।

এই বিশেষ মূর্তিতে দেবী শিশু মহাদেবকে তাঁর স্তন সুধা পান করাচ্ছেন ।তারা দেবীর  চতুর্ভূজা, মুণ্ডমালিনী এই মূর্তির মস্তকে রৌপ্য মুকুট দেখা যায় । বাইরের মূর্তিটি সাধারণ শাড়ি দিয়ে আবৃত থাকে । যার মাথার ওপরে থাকে একটি রুপোর  ছাতা । দেবীর  কপালে এক বিশেষ সিঁদুর থাকে এবং এই সিঁদুরের টিকা পেতেই দর্শনার্থীদের ভিড় হয় দেখার মত ।

ভক্তরা নারকেল, রেশমি শাড়ি ইত্যাদি অর্পণ করে দেবীর পুজা দেন। মহাপীঠ তারাপীঠ মন্দিরের  মহাদেব চন্দ্রচূড় নামে পরিচিত। তারাপীঠ মহাশ্মশানে আজও তান্ত্রিক বিচরণ করে থাকেন। সারা দেশ থেকে বড় সাধকরা এই স্থানে আসেন। মহাপীঠ তারাপীঠ দারোকা নদের তীরে অবস্থিত। এর আধ্যাত্বিক তাৎপর্য বিপুল । বিভিন্ন অমাবস্যায় এই মন্দিরে বিশেষভাবে পূজা হয়ে থাকে । যার মধ্যে কৌশিকী অমাবস্যা অন্যতম  ।

দেবী  মা তারাকে দর্শন  করতে অসংখ্য পূণ্যার্থীদের আগমন বিশেষভাবে লক্ষণীয় । এই মন্দিরে পুন নির্মাণ  করেছিলেন জয় দত্ত বণিক। এর পেছনেও  রয়েছে এক ইতিহাস । তবে তীর্থস্থানের সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে আজও জানা যায়নি । এই শক্তিপীঠের অলৌকিক রহস্যগুলি আজও মানুষকে চিন্তা করতে বাধ্য করে ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.