বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ

বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ আজ বাঙালি জাতির স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন ৭ই মার্চ । আজকের দিনে ১৯৭১ সালে সিংহহৃদয় পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, ‘…বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

গত ২০১৭ সালে  জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শেখ মুজিবর রহমানের সেই  তেজোদীপ্ত কণ্ঠের আহ্বান ছিল মুলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি। পশ্চিম পাকিস্তানের সীমাহীন বৈষম্য আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য এই ধরনের ভাষণের বিকল্প আর কিছুই ছিল না । মুলত বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শত নিপীড়ন উপেক্ষা করে এই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে স্বাধীনতার ডাক দেওয়া হয়। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

দীর্ঘ ৯ মাস বাঙ্গালী জাতি নিজেদের স্বাধীনতা লাভের স্বপ্নে লড়াই চালিয়ে গেছে । অবশেষে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। এই কারনে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তথা বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল বাঙ্গালীদের নয়, বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। 

অতীতের স্মৃতি চারনা করে যদি সেই দিনে একবার ফিরে যাওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, সেদিন সকাল থেকেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’এই ধরনের নানান  স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। বেলা ঠিক সোয়া ৩টায় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর মুজিবকোর্ট পরিহিত বঙ্গবন্ধু যখন মঞ্চে ওঠেন, তখন বাংলার বীর জনতা বজ্রনির্ঘোষে করতালি ও স্লোগানের মধ্যে তাকে স্বাগত জানান। এরপর বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম ও ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন এভাবে—‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।… আজ বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়।’ এরপর গত কয়েক দিনের ঘটনাবলি, শাসকশ্রেণির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় বাঙালির দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি ভাষণে বলেন, …‘এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।…. সৈন্যরা তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’

বঙ্গবন্ধু যখন এ ভাষণ দিচ্ছিলেন, ঠিক ঐ দিনই ঢাকায় এসে পৌঁছান জেনারেল টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী। আলোচনার অন্তরালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক প্রস্তুতির এই পর্যায়ে এ ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙ্গালী তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রেরণার চিরন্তন উদাহরণ হয়ে থাকবে ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.