সোলার প্যানেল কীভাবে কাজ করে জানতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে, সোলার প্যানেল কী? অনেকগুলো ফটোভোল্টায়িক কোষের সমষ্টিই হল সোলার প্যানেল বা সৌর প্যানেল। অনেকগুলো ফটোভোল্টায়িক কোষ মিলিতভাবে একটি সৌর প্যানেল তৈরি করে।

সোলার প্যানেল মুলত ফটো ইলেকট্রিক ক্রিয়া কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে থাকে। তাহলে প্রথমে জানতে হবে, ফটো ইলেকট্রিক ক্রিয়া কিভাবে কাজ করে?

কোনো তলে বা সারফেস এ যখন আলো এসে পড়ে, তখন ঐ সারফেস থেকে ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়ায় হলো ফটো ইলেকট্রিক ক্রিয়া ।

ফটোভোল্টায়িক কোষগুলো দুই স্তরবিশিষ্ট সেমিকন্ডাক্টরের তৈরি। অনেকটা স্যান্ডউইচ এর মতো। বিশেষত সিলিকন দিয়েই তৈরি হয় ফটোভোল্টায়িক কোষ। একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রয়োজন হয় ফটোভোল্টায়িক কোষ কাজ করার জন্য। তড়িৎক্ষেত্র তৈরি করার জন্য প্রস্তুতকারকরা এই সেমিকন্ডাক্টরে ডোপিং (ভেজাল) করে থাকেন। ভেজাল হিসেবে প্রস্তুতকারকরা সেমিকন্ডাক্টরে অন্য পদার্থ মিশিয়ে থাকেন। প্রথম স্তরে একটি বাড়তি ইলেকট্রন যোগ করার জন্য বিশেষত প্রথম স্তরে ফসফরাসকে ডোপিং পদার্থ হিসেবে মেশানো হয়ে থাকে। ফলে প্রথম স্তরটি তড়িৎ ঋণাত্মক হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্তরে ইলেকট্রনের ঘাটতি তৈরি করার জন্য দ্বিতীয় স্তরে ডোপিং পদার্থ হিসেবে বোরন যোগ করা হয়। মানে, দ্বিতীয় স্তর ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট হয়(P-type)। এইটাইএকটি ফটোভোল্টায়িক কোষের অভ্যন্তরীণ গঠন।

এরকম অনেকগুলো ফটোভোল্টায়িক সেল একত্রিত করে একটি সোলার প্যানেল বা সৌর কোষ তৈরি করা হয়। কিন্তু, সৌরকোষ বানালেই তো তা আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেনা। আমরা এবার এই সৌরকোষকে সূর্যালোকে নিয়ে যেতে হবে।

আমরা জানি যে কোনো আলোতে ফোটন থাকে। ফোটনের সমষ্টিই হলো আলো। তাহলে সূর্যালোকেও থাকবে ফোটন। কাজেই সূর্যালোকে প্রচুর ফোটন পাওয়া যায়। প্রতি সেকেন্ডে অগণিত ফোটন সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর উপর নির্গত হচ্ছে। এই ফোটনই মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে মুখ্য কাঁচামাল হিসেবে কাজ করে।

আমরা জানি, কম্পাঙ্ক হল শক্তির সমানুপাতিক। ফলে যত কম্পাঙ্ক বাড়বে শক্তিও তত বাড়তে থাকবে। তাহলে উৎপন্ন শক্তি হবে সোলার প্যানেলের উপর আপতিত আলোর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। যখন সূর্য থেকে অসংখ্য ফোটোন এসে সোলার প্যানেলে আপতিত হয় তখন সোলার প্যানেলে থাকা ইলেক্ট্রন সেই আপতিত ফোটোন থেকে শক্তি শোষণ করে এবং শোষণের পর ইলেকট্রন নির্গত হবে প্যানেল থেকে।

এভাবেই একটি ফোটন একটি ইলেকট্রনকে ধাক্কা দিয়ে নির্গত করে এবং তড়িৎক্ষেত্র সেই ইলেকট্রনকে সিলিকন জাংশনের বাইরে বের করে দেয়৷ এরপর একটি ধাতব প্লেট এই ইলেক্ট্রনগুলোকে সংগ্রহ করে। এই ইলেকট্রন গুলোকে একটি তারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এই ইলেকট্রন ই তড়িৎ উৎপাদন করে থাকে৷

সোলারের প্রতটি কোষ( সেল) ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যটারির মত কাজ করে সোলারের প্রতটি কোষ( সেল) এবং যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় তাই হলো ফটোভোল্টেজ। আর এভাবেই আমরা একটি সোলার প্যানেলে থাকা হাজার হাজার সেল থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি।

উল্লেখ্য ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াটি আলোর তীব্রতার উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে আলোর কম্পাঙ্কের উপর।

আমরা সৌরকোষ থেকে যে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি তা হলো ডি.সি.। এ, সি পাওয়ার এর জন্য প্রয়োজন হয় একটি ইনভার্টারের। এই ইনভার্টার ডি.সি. প্রবাহকে এ.সি. প্রবাহে রুপান্তর করে।

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.