বিধান নগর মেয়র সব্যসাচী দত্ত কে নিয়ে শাসক দলের মধ্যে বিরম্বনার শেষ নেই । এমনকি তার কাউন্সিলররাও তার বিরুদ্ধে এক এক করে মুখ খুলছেন । একজন মেয়র হিসেবে সব্যসাচী সফল নয় এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য । যার পরিপ্রেক্ষিতে দল বিরোধী তকমা পেয়েছেন সম্প্রতি সব্যসাচী দত্ত ।
দল বিরোধী কাজের অভিযোগে বিধান নগর পৌরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্তকে দল থেকে ছাড়ানোর প্রক্রিয়া খুব সম্ভবত শুরু করে দিল তৃণমূল । গতকাল তৃণমূল ভবনে 36 জন কাউন্সিলর কে নিয়ে একটা রুদ্ধদ্বার বৈঠক ডাকেন পুর দলের সভাপতি এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । অবশ্য ওই বৈঠকে দুইজন কাউন্সিলর হাজির ছিলেন না । খবর পাওয়া গেছে, এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রায় প্রতিটি কাউন্সিলর সব্যসাচী দত্তর বিরুদ্ধে তাদের মনের ক্ষোভ উগরে দেন । ফিরহাদ হাকিম তাদের সকলের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সব্যসাচী কে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তার রিপোর্ট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন ।
তবে ফিরহাদ হাকিমের বৈঠকে ডাক না পেলেও ওই দিন রাতেই আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরে ফেললেন সব্যসাচী দত্ত । সেটি ছিল আর কেউ নয় বিজেপির রাজ্য রাজনীতির চাণক্য মুকুল রায়ের সাথে । গভীর রাত পর্যন্ত বিধান নগর সুইমিং পুল অ্যাসোসিয়েশন -এ এই বৈঠক চলে । সেখানে রাতের খাওয়া-দাওয়া করে সবাই ।
সব্যসাচী দত্ত তৃণমূল-এ থাকবেন বলে ঘোষণা করেন । কিন্তু তার কার্যকলাপ এবং লোকসভার ভোটের পরবর্তি পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে । এইতো কয়দিন আগেই বিদ্যুৎ ভবন এর কর্মচারীদের আন্দোলনে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি । এক কথায় বলতে গেলে বলা জেতেই পারে, সেই আন্দোলন ছিল সরকার বিরোধী । এইসব ঘটনার মধ্যে তার কাউন্সিলরদের মতামত জানতে চাওয়া হলে তারা অভিযোগ করেন, মেয়র এর মাথা গরম, ব্যবহার খারাপ, কাউন্সিলরদের কোন কাজ করতে দিচ্ছেন না । এমনকি ভোটের পরে দীর্ঘদিন মেয়র পরিষদ বৈঠক ডাকা হয়নি । সব্যসাচী মেয়র পদের উপযুক্ত নন ।
এই সবের মধ্যেই আগুনের মধ্যে আর একটু ঘি ঢাললেন মুকুল রায় । ঐদিন দুপুরে মুকুল রায় বলেন, “বিগত লোকসভা নির্বাচনে সব্যসাচীর ভূমিকা আমাদের পক্ষে ভালো ছিল” ।
এই দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এর মতামত জানতে চাইলে বৈঠক শেষে বেরিয়ে তিনি বলেন, “দলের শৃঙ্খলা ভাঙলে দল সেই মতো ব্যবস্থা নেবে । বিধান নগরের কাউন্সিলরদের নিয়ে আমরা বৈঠকে বসে ছিলাম । তারা যা জনিয়েছেন সেই রিপোর্ট আমি দলের নেত্রীকে দেব। তা নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলে দলের শৃঙ্খলা ভাঙ্গা হবে । আর তা করলে তো আমার আর সব্যসাচীর মধ্যে কোন তফাৎ থাকবেনা” ।
এদিকে মুকুল রায়ের প্র তিক্রিয়া ছিল, “আমি সব্যসাচী কে নিজের ভাইয়ের মত দেখি । তার সাথে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি । আমি কেবল দাদা হিসেবে সব্যসাচী কে উপদেশ দিয়ে গেলাম” ।
পুরো নিগমের মেয়রের দায়িত্ব আপাতত বহাল করা হলো ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে । সুতরাং এখন বলাই যায় সব্যসাচী দত্তের গেরুয়া শিবিরে যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ।