পিঠার রেসিপিঃ পিঠা বা পিঠে একটি উপাদেয় খাবার। সমস্ত বাংলায় বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরি হয় এবং পিঠের রেসিপি এর সংখ্যা ও কম নয়। পিঠা তৈরি ও অনুষ্ঠান, আপ্যায়নে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি হয়। বংশ পরমপরায় পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া বাঙ্গালীদের মধ্যে প্রচলিত। বেশিরভাগ পিঠাই মিষ্টিজাতীয়। তবে ঝাল টক পিঠাও তৈরী হয়। শীতকালের পিঠা বেশী সুস্বাদু। এ সময়ে নতুন ধান, খেজুরের রস, আখের গুড় পাওয়া যায়। পিঠা বাংলার আদিম এবং আভিজাত্যপূর্ভ খাবার।

পিঠা বাংলার খাবারের ঘর থেকে সাহিত্যিকদেরও কম নাড়ায়নি। বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি সুফিয়া কামাল লিখেছেন “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে; আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।“ বাংলার ভাওয়াইয়া গানেও পিঠার প্রভাব কম নয় “মনটাই মোর পিঠা খাবার চাই”

বাঙ্গালীর এই পিঠা তৈরির পদ্ধতি আজ আপনাদের জানানোর জন্য বিখ্যাত দশটি পিঠার রেসিপি আপনাদের সামনে বং দুনিয়ার পক্ষ থেকে তুলে ধরলাম।

পিঠার রেসিপি

গোকুল পিঠেঃ

পিঠার রেসিপি

গোকুলপিঠা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বাংলায় প্রচলিত। গোকুলপিঠা মধ্যযুগ থেকে বাংলায় প্রচলিত পিঠা সমূহের অন্যতম। জন্মাষ্টমী ও সংক্রান্তির সময় এটি প্রধানত বানানো হয়ে থাকে।

উপকরণ: নারকেল, চিনি, এলাচের গুঁড়ো, দুধ, ময়দা ।

প্রণালী : নারকেল কুরে নিতে হবে | ১/২ কাপ চিনি দিয়ে নারকেলটা পাক দিয়ে নিতে হবে | পাক দেওয়া নারকেলের মধ্যে একটু এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নিন | পাক করা নারকেল আলুর চপের আকারে গড়ে নিন | একটা পাত্রের মধ্যে দুধ-ময়দা গুলে নিন | কড়াইতে সাদা তেল দিয়ে গরম করে নিন | চপের আকারে গড়া নারকেল পাককে গোলায় ডুবিয়ে তেলে ভাজুন | আলাদা করে চিনির রস করে নিন | নারকেলের চপগুলিকে বাদামি করে ভেজে তুলে নিয়ে রসে ছেড়ে দিন | কিছুক্সণ রেখে রস ভালো করে চপে ঢুকে গেলে তুলে পরিবেশন করুন |

পাকন পিঠাঃ

বরিশালের বিখ্যাত পাকন পিঠা।  সুন্দরী পাকন পিঠা এলাকা ভেদে ফুল পিঠা, দোভাজা পিঠা বা নকশী পিঠা নামে পরিচিত।

উপকরন: ময়দা, দুধ, লবন, ডিম, টোস্ট বিস্কুটেরগুড়ো, ঘি, পিঠার সাজ বা চামচ বা ছুরি, সিরার জন্য-চিনি, পানি, সবুজ এলাচ
প্রনালী: এ্কটি পাত্রে দুধ,ঘি ও লবন দিয়ে বলক আসলে ময়দা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ঢেকে একদম অল্প আচেঁ ৫ মিনিট রাখুন।
সসপ্যানে খামির নিয়ে একটু ঠান্ডা করে হাতে ঘি মাখিয়ে ভাল করে মথুন।খামির কম হলেও ১০ মিনিট মথতে হবে।ডিম ও বিস্কুটেরগুড়ো দিয়ে আরও কিছুসময় মথতে হবে। এখন গোল বা ডিমের আকৃতি করে পিঠার সাজ বা চামচ দিয়ে ডিজাইন করে ডুবতেলে অল্পতাপে ভাজুন। এ্কটি পাত্রে পানি ,চিনি ও এলাচ দিয়ে সিরা করুন।সিরা পাতলা থাকবে। এ্কটি ছড়ানো পাত্রে সিরা হাল্কা গরম থাকা অবস্থায় পিঠা সিরায় দিয়ে ৫ ঘন্টা রেখে দিন।পিঠা যেন একটার সাথে অন্নটা লেগে না যায় কারন সিরায় ভিজে এটা ফুলে বড় হবে।

পিঠার রেসিপি

নারকেলের তিল পুলিঃ

উপকরণঃ ভাজা তিলের গুঁড়া, খেজুরের গুড়, এলাচ গুঁড়া, দারচিনি, আতপ চালের গুঁড়া, পানি, লবণ, তেল।

প্রণালীঃ
কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও একটু রান্না করতে হবে। তেল উঠে পুর যখন পাকানোর মতো শক্ত হবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। এবার চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনো চাকা না থাকে। একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে রুটি বানাতে হবে। রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার টিনের পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে কেটে নিতে হবে। কিনারে মুড়ি ভেঙে ও নকশা করা যায়। গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে।

চিতই পিঠাঃ

চিতই পিঠা একটি বাঙালি পিঠা যা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুবই জনপ্রিয়। এই পিঠা দেখতে গোলাকার ও চ্যাপ্টা। গ্রামাঞ্চলে চিতই পিঠার ছাঁচ দেখতে পাওয়া যায়। এটি চিতে পিঠে, ঢাকা পিঠে, চিতুই পিঠে, চিকুই পিঠে ও সরা পিঠে, আসকে পিঠে নামেও পরিচিত।

উপকরণঃ চালের, পানি ও লবণ ।

প্রণালীঃ
চালের গুড়ায় পানি মিশিয়ে তরল মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন বেশি পাতলা বা বেশি ঘন যেন না হয়। তবে পাতলা গোলা করলে পিঠা সুন্দর নরম হয়। যে পাত্রে পিঠা ভাজবেন সেটাতে সামান্য তেল মাখান। এখন পাত্রটি হালকা গরম করে ২ টেবিল চামচ চালগোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ২-৩ মিনিট পর পিঠা তুলে ফেলুন। বিভিন্ন রকম ভর্তা, ভুনা মাংস দিয়ে এই পিঠা খেতে বেশ মজা।

 

পিঠার রেসিপি

ভাপা পিঠাঃ

ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি গ্রামীণ নাশতা হলেও বিংশ শতকের শেষভাগে প্রধানত শহরে আসা গ্রামীন মানুষদের খাদ্য হিসাবে এটি শহরে বহুল প্রচলিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে এমনকী রেস্তরাঁতে আজকাল ভাঁপা পিঠা পাওয়া যায়।

উপকরণঃ সিদ্ধ চালের গুঁড়া, ভেঙে নেওয়া খেজুরের গুড়, নারিকেল কোরানো, লবণ।

প্রণালীঃ
চালের গুঁড়িতে লবণ মিশিয়ে হালকা করে পানি ছিটিয়ে ঝুরঝুরে করে মেখে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন দলা না বাঁধে। এবার বাঁশের চালনিতে চেলে নিন। ভাপা পিঠা বানানোর হাঁড়িতে পানি দিন। এবার মুখ ছিদ্র ঢাকনা বসিয়ে আটা দিয়ে আটকে দিন। যাতে বাষ্প বের হতে না পারে। চুলায় বসিয়ে জ্বাল দিন। পাতলা সুতার দুই টুকরা কাপড় ও ছোট দুটি বাটি নিন। এবার বাটিতে চালা চালের গুঁড়ি দিয়ে মাঝখানে গর্ত করে গুড় ও নারিকেল দিন। আবার চালের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিন। এবার এক টুকরা পাতলা সুতির কাপড় ভিজিয়ে পিঠার বাটি ঢেকে উল্টে মুখ ছিদ্র ঢাকনার ওপর পিঠা রেখে সাবধানে বাটি খুলে পিঠা ঢেকে দিন। সিদ্ধ হলে পিঠা উঠিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

দুধচিতই পিঠাঃ

উপকরণঃ চালের গুড়া, পানি ও লবণ, দুধ, গুড় ।

প্রণালীঃ
চালের গুড়ায় পানি মিশিয়ে তরল মিশ্রণ তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন বেশি পাতলা বা বেশি ঘন যেন না হয়। তবে পাতলা গোলা করলে পিঠা সুন্দর নরম হয়। যে পাত্রে পিঠা ভাজবেন সেটাতে সামান্য তেল মাখান। এখন পাত্রটি হালকা গরম করে ২ টেবিল চামচ চালগোলা দিয়ে ঢেকে দিন। ২-৩ মিনিট পর পিঠা তুলে ফেলুন। ১ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে সামান্য ঘন করুন। আলাদা করে দেড়কাপ পানিতে ২ কাপ গুড় জ্বাল দিয়ে গুড়ের সিরা তৈরি করুন। সিরায় পিঠা ছেড়ে চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। ঠাণ্ডা হলে দুধ দিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখুন।সকালে এই পিঠা খেতে মজা।

পিঠার রেসিপি

দুধপুলিঃ

পিঠার রেসিপি

দুধ পুলি, পুলিপিঠা বা পুলিপিঠে একধরণের পিঠাজাতীয় খাবার যা বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠাসমূহের মধ্যে পুলিপিঠে অন্যতম। খুলনা অঞ্চলে এটা কুলিপিঠা নামেও পরিচিত।

উপকরণঃ চালের গুঁড়া, দুধ, খেজুরের গুড়, নারকেল কোরানো, গুড়

প্রণালীঃ
দুধ ও গুড় জ্বাল দিয়ে ঘন করতে হবে, নারকেল ও গুড় জ্বাল দিয়ে পুর তৈরি করতে হবে। চালের গুঁড়া সিদ্ধ করে ভালো করে মেখে নিতে হবে, এবার ছোট ছোট লুচি কেটে গোল করে মাঝখানে পুর ভরে ছোট ছোট পুলি পিঠা তৈরি করতে হবে। চুলায় দুধ থাকা অবস্থায় পিঠা দিয়ে অল্প জ্বাল দিয়ে পিঠা হলে নামিয়ে গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন। ঠাণ্ডা করেও খাওয়া যায়।

দুধে ভেজানো হাতকুলিঃ

উপকরণঃ ঘন দুধ, রান্না করা নারকেলের পুর, খেজুরের গুড় মিষ্টি অনুযায়ী, পানি, আতপ চালের গুঁড়া দিয়ে বানানো সিদ্ধ খামি, কাজু কিশমিশ, মাওয়া, এলাচ গুঁড়া

প্রণালীঃ
হাতে ছোট ছোট পুরির আকারে খামির নিয়ে একটু গর্ত করে তাতে পুর ভরে ভালোভাবে আটকে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। পিঠার মুখ ভালো করে না আটকালে দুধে ভেজালে ভেঙে যেতে পারে। এভাবে সব পিঠা বানানো হলে চুলায় গুড়-পানি দিয়ে ১০ মিনিট ফোটাতে হবে।

আস্তে আস্তে ঘন দুধ দিয়ে আরও দু-তিন মিনিট রেখে ধীরে ধীরে অল্প অল্প করে পিঠা ছড়িয়ে দিতে হবে। পিঠা সিদ্ধ হয়ে গেলে মাওয়া দিয়ে মাখাতে হবে। সুন্দর বাটি বা ডিশে বেড়ে ওপরে বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

 

পিঠার রেসিপি

নকশি পিঠাঃ

নকশি পিঠা এক ধরণের নকশা করা পিঠা যা বাংলাদেশে প্রচলিত। এটি এক প্রকার লোকশিল্প যা মেয়েলি শিল্প নামেও পরিচিত। এই পিঠার গায়ে বিভিন্ন ধরনের নকশা আকা হয় বা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে চিত্রিত করা হয় বলে় একে নকশি পিঠা বলা হয়। নকশার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পিঠার বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়, যেমন শঙ্খলতা, কাজললতা, চিরল বা চিরনপাতা, হিজলপাতা, সজনেপাতা, উড়িয়াফুল, বেঁট বা ভ্যাট ফুল, পদ্মদীঘি, সাগরদীঘি, সরপুস, চম্পাবরণ, কন্যামুখ, জামাইমুখ, জামাইমুচড়া, সতীনমুচড়া

উপকরণঃ চালের গুঁড়া, পানি, লবণ, ঘি, তেল, সিরার জন্য- গুড়, চিনি, পানি।

প্রণালীঃ
পানিতে লবণ ও ঘি দিয়ে চুলায় দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে কাই বানাতে হবে।
আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বানিয়ে পছন্দমতো আকার দিয়ে কেটে নিন। খেজুর কাঁটা দিয়ে রুটিতে পছন্দমতো নকশা করুন।
এবার প্রথমে ডুবোতেলে ভেজে নিন। কিছুক্ষণ পর আবার তেলে ভেজে সিরায় দিয়ে ১ মিনিট রেখে তুলে নিন। ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন।

লাল পুয়াপিঠাঃ

উপকরণঃ আতপ চালের গুঁড়া, মিহি করে বাটা নারকেল, ময়দা, বেকিং পাউডার, খেজুরের গুঁড় বা রস মিষ্টি অনুযায়ী, পানি, ডিম, লবণ এবং তেল।

প্রণালীঃ
তেল ছাড়া সবকিছু মিশিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এবার তেল গরম হলে গোল চামচে গোলা নিয়ে একটা একটা করে ভেজে তুলুন।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.