বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ চাঞ্ছল্যকর তথ্য প্রকাশ পেল ইতালির বিরুদ্ধে । সেখানে একটি মেডিকেল জার্নাল সম্প্রতি তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রকাশ করেছে, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ইতালিতে । আর দিনকে দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে । এই পরিস্থিতিতে সেখানকার চিকিৎসকদের বেছে নিতে হচ্ছে কাকে বাচান হবে আর কাকে নয় !
চীনের পরেই করোনার প্রভাব বিস্তার হয়েছে সবচেয়ে বেশী ইতালিতে । এই মুহূর্তে সেখানে মৃতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে । আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ । ‘কোভিড ১৯ অ্যান্ড ইতালি’ নামে একটি মেডিক্যাল জার্নাল জানিয়েছে, আর দুয়েক দিনের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা ছোঁবে প্রায় ১০ হাজার, আক্রান্ত হবেন ৩০ হাজার । এদিকে ইতালিতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কোয়ারেন্টাইনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু-এর মতে, এই পরিসংখ্যান চিনের থেকেও বেশি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে চলেছে।
একজন চিকিৎসকের কাজ হল মানুষের জীবন বাঁচানো । কিন্তু ‘কোভিড ১৯ অ্যান্ড ইতালি’ নামক জার্নালের মতে, শুনতে অবাক লাগলেও ইতালির পরিস্থিতি এখন এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে যে, করোনার প্রভাবে এক অসহায় অবস্থায় পড়েছেন সে দেশের চিকিৎসকরা। কারন একসাথে এত বেশী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে যে, আগামী দিনে হয়ত তাদের হাত পা বাঁধা পড়ে যেতে পারে । সেই সময় হয়ত তাদের ঠিক করতে হবে যে কাদের তাঁরা চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন এবং কাদের বাধ্য হয়ে ফেলে রাখবেন ? যদিও জানা গেছে, বর্তমানে ইতালি সরকার বিশাল সংখ্যায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসোলেশন ইউনিট তৈরি করতে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।
এছাড়াও ‘কোভিড ১৯ অ্যান্ড ইতালি’ নামক মেডিকেল জার্নালের দাবী, চিকিৎসকদের এমন মনোভাব অনেকের কাছে সমালোচনাযোগ্য মনে হলেও, এই অবস্থা এড়ানোর আর উপায় দেখছেন না চিকিৎসকরা। দেশের মানুষের স্বার্থেই, করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করার স্বার্থেই তাঁদের এই ‘বাছাবাছি’ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা ! সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারন, এর মধ্যে ভয় বাড়িয়ে, বেশ কিছু চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী সংক্রামিত হতে শুরু করেছেন ইতালিতে।
‘কোভিড ১৯ অ্যান্ড ইতালি’ ছাড়াও উত্তর ইতালির লম্বার্ডিয়া অঞ্চলের বার্গামো শহরের একটি হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক, ডক্টর ক্রিশ্চিয়ান সালারোলি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক একটি সংবাদমাধ্যমে। তিনি বলেছেন, “আমাদের এখন অদ্ভুত এক অবস্থা। নীতি বলছে, বয়স-লিঙ্গ না দেখে প্রতিটি মানুষকে সেরা চিকিৎসা-পরিষেবা দিতে হবে আমাদের। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, নীতি থেকে সরতে হবে আমাদের। ৮০ থেকে ৯৫ বছর বয়সের ব্যক্তিরা যদি অসুস্থ হয়ে আসেন, তাঁরা যদি ভীষণ শ্বাসকষ্টেও ভোগেন তবে চিকিৎসার জন্য এগিয়ে যেতে পারছি না আমরা। কারণ অল্পবয়সি অসংখ্য মানুষ একই সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসার জন্য। এটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে। বলতে পারি, ভয়াবহ লাগছে। কিন্তু এটাই এখন সত্যি। শত আক্ষেপের পরেও আমরা এই অবস্থা থেকে বেরোতে পারছি না।”
এদিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য বলছে, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যার দিক থেকে জাপানের পরেই বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। আবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সবচেয়ে বেশী বিপদ দেখা দিচ্ছে বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে । এই অসহায় পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কাজ সামান্য হলেও সহজ করার জন্য ‘ইতালিয়ান সোসাইটি অফ অ্যানাস্থেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া, রিহ্যাব ও ইন্টেনসিভ থেরাপি’ (এসআইএএআরটিআই)-র পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ডাক্তারদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যে বিশেষ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র কাদের আইসোলেশনে রেখে ইনটেনসিভ পরিচর্যার জন্য বেড দেওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বক্তব্যের সহজ অর্থ হয়, প্রয়োজন হলেও ইনটেনসিভ পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রত্যেকের জন্য জায়গা থাকবে না।