বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক:সোশ্যাল মিডিয়ায় রানু মন্ডল একটি ভাইরাল নাম । কারণ রানু মন্ডলের নামে কিছু পোস্ট মানেই সেটি কয়েক লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে নিমিষে, সাথে সাথে শেয়ার হচ্ছে কয়েক হাজার । রানাঘাট থেকে বলিউডে তার স্বপ্নের উড়ান শুরু করেছিলেন । কিন্তু হঠাৎ করে তিনি এমনই এক মন্তব্য করে বসলেন, যার কারণে বেশ বিতর্ক ঝড় উঠে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায় । কি ছিল সেই মন্তব্য ? বম্বে থেকে হিমেশ রেশমিয়ার সাথে প্লে-ব্যাক করার পর কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রানু মন্ডল উত্তর দিলেন, “কারো সাহায্য নয়, আমি ভগবানের দৌলতে এইসব করছি – ওরা ভগবানের চাকর” ।’ওরা’ বলতে এখানে রানু মন্ডল তার সাহায্যকারীদের বুঝিয়েছেন ।
রানাঘাট স্টেশন ও স্টেশনের আশে পাশে গান গেয়ে ভিক্ষে করতেন রাণু। তাঁর গানের প্রতিভা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাকশিত হবার পর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তিনি এখন সেলিব্রিটি। পুজোর থিম সং গাওয়া থেকে শুরু করে হিমেশ রেশমিয়ার হাত ধরে বলিউডের সিনেমায় প্লে ব্যাক– একের পর এক চমকে সারা দেশের মানুষের কাছে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন তিনি। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও তাঁর ডাক আসছে । রানাঘাট থেকে এই জার্নি শুরু হলেও বলিউড পর্যন্ত সকলেই এখন তাঁর কণ্ঠে মাতোয়ারা। তবে এ সব কিছুর পেছনেই নিঃশব্দে থেকে গিয়েছেন যে মানুষটি, তাঁর নাম অতীন্দ্র চক্রবর্তী। অতীন্দ্র পেশায় ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার। রানাঘাট স্টেশন দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন তিনি। যাতায়াতের পথে স্টেশন চত্বরেই রাণুর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁর গান রেকর্ড করেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন অতীন্দ্র। ২০ জুলাইয়ের সেই পোস্ট-ই ভাইরাল হয়ে যায় সারা দেশে। রাতারাতি ফেসবুকের সেনসেশন হয়ে ওঠেন ‘ভিখারিণী’ রাণু।
তাঁর কণ্ঠের প্রশংসায় বন্যা বয়ে যায় সারা দেশে। অনেকেই তাঁকে দিয়ে গান গাওয়ানোর প্রস্তাব রাখেন, একাধিক জায়গা থেকে নিমন্ত্রণ আসতে থাকে। কিন্তু রাণুর তো মোবাইল নেই, কী ভাবে যোগাযোগ হবে? তাই সেই অতীন্দ্রই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েছিলেন রাণুর হয়ে। রাণুকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাজারো ফোনকল তিনিই সামলান। তাঁর মাধ্যমে যোগাযোগ করেই টেলিভিশনের একটি জনপ্রিয় গানের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয় রাণুকে। সেই অনুষ্ঠানে রাণুর গান শুনে, তাঁকে দিয়ে প্লে ব্যাক করানোর প্রতিশ্রুতি দেন হিমেশ রেশমিয়া।এমনকি মুম্বইয়ে সেই প্লে-ব্যাক রেকর্ড করতে যাওয়ার সময়েও অতীন্দ্রই রাণু-কে আগলে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অতীন্দ্রকেই সাংবাদিকদের সামনে ‘ভগবানের চাকর’ বলে উল্লেখ করেন রানু মণ্ডল । যেটি তাঁকে নিয়ে বেশ সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে । সম্প্রতি রাণু মণ্ডলের একটি সাক্ষাৎকার নেওযা হয় ই নিউজ় বাংলা সংবাদমাধ্যম থেকে। সেখানে রানুকে প্রশ্ন করা হয়, এই যে অতীন্দ্রের মতো মানুষের দৌলতে তিনি এত জায়গায় যাচ্ছেন, এ নিয়ে তিনি কী বলবেন? এতেই সঙ্গে সঙ্গে রাণু বলে ওঠেন, “ভগবানের দৌলতে যাচ্ছি। ওরা ভগবানের সারভেন্ট, চাকর। আমি ওদের সাহায্যে যাচ্ছি না। ভগবানের সাহায্যে যাচ্ছি। ওরা ভগবানের চাকর হয়ে যাচ্ছে।”
রাণু মণ্ডলের এই ভিডিও নেট-দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই নেটিজেনদের বক্তব্য, যে মানুষটা তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিলেন, তাঁকেই কি না ‘চাকর’ বললেন রাণু ? কৃতজ্ঞতাবোধ কি একেবারেই নেই ? খ্যাতি পেয়ে কি এভাবেই বদলে যেতে হয় ?
অবশ্য পাশাপাশি অনেকেই রানু মন্ডল কে সমর্থন করছে । কারন তাঁর জীবনে যেটি হচ্ছে সেটি এতটা দ্রুত তা সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। তাঁদের মতে, না বুঝেই বলে ফেলেছেন রাণু। স্টেশনে গান গেয়ে বেড়ানো রাণু মণ্ডল-এর কাছে এই খ্যাতি অভাবনীয়। এখনও বুঝে উঠতে শেখেননি কোথায় কী ভাবে কথা বলতে হবে।