দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী, রচনা 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বহু সাহিত্যিক, নাট্যকার, কবি সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। দীনবন্ধু মিত্র তাঁদের মধ্য অন্যতম । দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী, নাটক, কবিতা, রচনাবলী প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞাত হলে সে কথা স্পষ্ট বোঝা যায় যে দীনবন্ধু মিত্র কতটা বড় মাপের নাট্যকার ছিলেন ।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনীঃ  দীনবন্ধু মিত্র ১৮৩০ সালের ১লা নভেম্বর ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার চৌবেরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন  । তাঁর পিতার নাম ছিল কালাচাঁদ মিত্র ।বাল্যকালে দীনবন্ধুর পিতৃদত্ত নাম ছিল গন্ধর্ব নারায়ণ।   দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি । ছোটবেলায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রাম্য পাঠশালায় । দারিদ্রতার কারনে  সেখানে কিছুদিন পাঠগ্রহণের পর তার পিতা তাকে জমিদারের সেরেস্তার কাজে নিযুক্ত করে দেন।

কিন্তু দীনবন্ধু মিত্র বরাবরের মত বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। জমিদারের সেরেস্তার কাজ ছেড়ে তাই তিনি কলকাতায় পালিয়ে আসেন । সেখানে তাঁর পিতৃব্যের গৃহে বাসন মেজে লেখাপড়া চালিয়ে যান । পাশাপাশি তিনি তাঁর পিতৃদত্ত নাম পরিবর্তন করে  দীনবন্ধু নাম গ্রহণ করেন এবং জেমস লঙের অবৈতনিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল (বর্তমানে হেয়ার স্কুল) থেকে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের শেষ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করে হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ) ভর্তি হন। পড়াশোনায় দীনবন্ধু মিত্র মেধাবী ছিলেন ।  ১৮৫১ সালে আবার উচ্চতর পরীক্ষায় বৃত্তিলাভ করেন এবং ১৮৫২ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকে সিনিয়র বৃত্তিলাভ করেন ।শিক্ষা জীবনে প্রত্যেক পরীক্ষায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনিই সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছিলেন ।

দীনবন্ধু মিত্র তাঁর কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে । পড়াশোনা শেষ করে  সম্ভবত কোথাও শিক্ষকতা করেছিলেন দীনবন্ধু, কারণ ১৮৫৩ সালে তিনি টিচারশিপ একজামিনেশনে কৃতকার্য হয়েছিলেন। কলেজের সব পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন  ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে। ব্রিটিশ আমলে  দীনবন্ধু মিত্র  ঢাকায় পোস্ট মাস্টার হিসেবে যোগদান করেন । তার পর তিনি  ১৮৫৫ সালে ১৫০টাকা বেতনে পটনায় পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন। ক্রমে তার পদোন্নতি হয় এবং তিনি ওড়িশা, নদিয়া ও ঢাকা বিভাগে এবং পরে কলকাতায় সুপারিনটেন্ডেন্ট পোস্টমাস্টার নিযুক্ত হন।লুসাই যুদ্ধের সময় ডাকবিভাগের কাজে তিনি কাছাড়ে প্রেরিত হন। কাজের সুনামের জন্য  ১৮৭১ সালে ভারত সরকার  দীনবন্ধু মিত্রকে  “রায়বাহাদুর” উপাধি দান করেন। দুঃখের বিষয়, ডাকবিভাগের উচ্চস্তরের কর্মচারী হয়েও উপযুক্ত বেতন তিনি পাননি।

দীনবন্ধু মিত্র ক্ষীণ জন্মা ছিলেন ।  ১৮৭৩ সালের ১লা নভেম্বর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে দীনবন্ধু মিত্র মৃত্যু বরণ করেন।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী, দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্যকর্মঃ

দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্য জগতে প্রবেশ কবিতা দিয়ে । জানা যায়  ঈশ্বর গুপ্তের অনুপ্রেরণায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর কবিতা প্রকাশ পায়,  সংবাদ প্রভাকর (১৯৩১), সংবাদ সাধুরঞ্জন (১৮৪৭) পত্রিকায়। তবে কবিতা দিয়ে শুরু করলেও দীনবন্ধু মিত্রের খ্যাতি মুলত নাট্যকার হিসাবে ।  তাঁর রচিত জনপ্রিয় কাব্যগুলো হলো  সুরধুনী কাব্য, দ্বাদশ কবিতা । দীনবন্ধু মিত্রের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি  সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় আর্থ-সামাজিজ ও রাজনৈতিক বিষয়ে নাটক লেখেন  । তবে শুধুমাত্র নাটক নয়,  তিনি প্রহসন রচনাও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ইংরেজি শিক্ষিত নব্য যুবকদের মদ্যপান ও বারনবণিতা সঙ্গকে ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত প্রহসন,  সধবার একাদশী (১৮৬৬) । এছাড়াও সমাজের প্রাচীনপন্থীদের ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত প্রহসন,  বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬) ।

সংক্ষেপে দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্য কর্মঃ

কাব্যগ্রন্থঃ  সুরধুনী,  দ্বাদশ কবিতা

নাটকঃ  নীল দর্পণ(১৮৬০), নবীন তপস্বিনী, লীলাবতী, কমলে কামিনী

 প্রহসন মূলক রচনাঃ  সধবার একাদশী (১৮৬৬),  বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬),  জামাই বারিক

 গল্প সমূহঃ যমালয়ে জীবন্ত মানুষ,  পোড়া মহেশ্বর।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী

দীনবন্ধু মিত্রের নাটক “নীল দর্পণ” 

দীনবন্ধু মিত্রের নাটক “নীল দর্পণ”  ছিল তাঁর  প্রথম প্রকাশিত সাহিত্য কর্ম। নীল দর্পণ’ নাটকের কাহিনীসসূত্র বাস্তব ঘটনাকেন্দ্রিক ।  এ নাটকটির ঘটনা, বিষয়চিন্তা, রচনাস্থান, প্রকাশস্থান, মুদ্রণালয়, প্রথম মঞ্চায়ন সবই বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ঢাকায় থাকাকালীন তিনি এটি রচনা করেন ।এটি ১৮৬০ সালে ঢাকার প্রথম ছাপাখানা ‌‌বাংলা প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। দীনবন্ধু মিত্রের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক নীলদর্পণ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ পরিচিত নাটক। এখানে বর্ণিত কাহিনীটি মেহেরপুর অঞ্চলের নীলকরদের অত্যাচার বিষয়ক কাহিনী। নীলদর্পণ নাটকের মূল উপজীব্য বিষয় হল,  বাঙালি কৃষক ও ভদ্রলোক শ্রেণীর প্রতি নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী। কিভাবে সম্পন্ন কৃষক গোলকমাধবের পরিবার নীলকর অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে গেল এবং সাধুচরণের কন্যা ক্ষেত্রমণির মৃত্যু হল, তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র অঙ্কিত হয়েছে এই নাটকে। তোরাপ চরিত্রটি এই নাটকের অত্যন্ত শক্তিশালী এক চরিত্র; বাংলা সাহিত্যে এর তুলনা খুব কমই আছে। এই নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক ভাষার সাবলীল প্রয়োগ। কর্মসূত্রে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় যে দক্ষতা দীনবন্ধু আয়ত্ত করেছিলেন, তারই এক ঝলক দেখা মেলে এই নাটকের জীবন্ত চরিত্রচিত্রণে।  স্বাদেশিকতা, নীল বিদ্রোহ ও সমসাময়িক বাংলার সমাজব্যবস্থার সঙ্গে এই নাটকের যোগাযোগ অত্যন্ত গভীর।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী

এই নাটকটি তিনি রচনা করেছিলেন নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ-পথিক ছদ্মনামে। যদিও এই নাটকই তাকে খ্যাতি ও সম্মানের চূড়ান্ত শীর্ষে উন্নীত করে। “নীল দর্পণ” বিষয়ে  অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,  “ ‘নীলদর্পণ’ নাটক প্রকাশিত হলে এবং এর ইংরেজি অনুবাদ প্রচারিত হলে একদিনেই এ নাটক বাঙালিমহলে যতটা প্রশংসিত হয়েছিল, শ্বেতাঙ্গমহলে ঠিক ততটাই ঘৃণিত হয়েছিল। এই নাটক অবলম্বন করে বাঙালির স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের সূচনা, এই নাটক সম্বন্ধে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও রায়তদের মধ্যে মৈত্রীবন্ধন স্থাপিত হয়, এর মধ্যে দিয়েই শ্বেতাঙ্গ নীলকরদের বর্বর চরিত্র উদ্ঘাটিত হয়।

নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তবে আধুনিক গবেষকগণ এই বিষয়ে একমত নন। এই অনুবাদ Nil Durpan, or The Indigo Planting Mirror নামে প্রকাশ করেছিলেন রেভারেন্ড জেমস লঙ। এই অনুবাদ প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং জেমস লঙের জরিমানা ও কারাদণ্ড হয়। জরিমানার টাকা আদালতেই দিয়ে দেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এটিই প্রথম বাংলা নাটক যা ইংরেজিতে অনূদিত হয়। নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রেরিত হয়। স্বদেশে ও বিদেশে নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ফলে সরকার ইন্ডিগো কমিশন বা নীল কমিশন বসাতে বাধ্য হন। আইন করে নীলকরদের বর্বরতা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই নাটকের সঙ্গে হ্যারিয়েট স্টো-এর আঙ্কল টমস্‌ কেবিন গ্রন্থের তুলনা করেছিলেন। তা থেকেই বোঝা যায়, সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য ও বাঙালির সমাজজীবনে এই নাটক কি গভীর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষজনের জীবনকথা এমনই স্বার্থক ও গভীরভাবে নীলদর্পণ নাটকে প্রতিফলিত হয়েছে যে অনেকেই এই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আবার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলে এই নাটকই প্রথম জাতির জীবনে জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটিয়েছিল।

যদিও সামগ্রিকভাবে এই নাটকের কিছু আঙ্গিকগত ত্রুটিও সমালোচকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। যেমন এই নাটকে চরিত্রে অন্তর্দ্বন্দ বড় একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। বহির্সংঘাতের আধিপত্যে কোনও চরিত্রই বিকাশশীল হয়ে উঠতে পারেনি। নাট্য কাহিনিতেও যথোপযুক্ত জটিলতা না থাকার কারণে নাটকটি দর্শকমহলে তদনুরূপ আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। সমাজের নিচু তলার বাসিন্দাদের ছবি এই নাটকে অত্যন্ত জীবন্ত হলেও ভদ্রলোক শ্রেণীর চরিত্রগুলির আচরণ ও সংলাপ এখানে বড় কৃত্রিম। এছাড়াও ট্রাজেডি রচনায় যে সংযম ও বিচক্ষণতা প্রত্যাশিত, দীনবন্ধু তার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে আতিশায্যের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন। ফলে নাটকের অনেক অংশই মেলোড্রামাটিক বা অতিনাটকীয়তার দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। যার কারণে যথার্থ ট্র্যাজেডি হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্যতা হারায় নীলদর্পণ।

দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ”  নাটকটি প্রথম বারের মঞ্চায়িত হয় ঢাকায় । সেখানে মঞ্চে  উল্লেখযোগ্য চরিত্রে ছিলেন  গোলক বসু, নবীন মাধব, রাইচরণ, তোরাপ, সাবিত্রী, সরলতা, ক্ষেত্রমণি ইত্যাদি ।  এ নাটক দেখতে এসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মঞ্চের অভিনেতাদের লক্ষ্য করে জুতা ছুঁড়ে মেরেছিলেন।

দীনবন্ধু মিত্রের প্রহসন মূলক রচনা –  সধবার একাদশী, দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী

সধবার একাদশী দীনবন্ধু মিত্রের একটি বিখ্যাত প্রহসন। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র তখন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মসূত্রে যখন তিনি ভারতের নদীয়া ও উড়িষ্যা এবং বাংলাদেশের ঢাকা এই ৩টি জেলার পোস্টাল বিভাগের ইন্সপেক্টিং পোস্ট মাস্টার হিসেবে নিযুক্ত,  তখন তিনি এ প্রহসনটি রচনা করেন। নাটকটি সর্বপ্রথম ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি প্রখম মঞ্চস্থ হয় কলকাতার বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটার দলের উদ্যোগে, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে।। অটল এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তান। তার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব। অন্তরঙ্গ বন্ধুরা তাকে কুপথে পরিচালিত করে। সে মদে আসক্ত হয় এবং বেশ্যা গমন শুরু করে। সে কাঞ্চন নামীয় একজন বেশ্যাকে স্বগৃহে রক্ষিতা হিসেবে রাখতে উদ্যত হয়। অটলের পিতা পুত্রের এহেন অনাচারে আপত্তি করেন। কিন্তু অটলের মা পুত্র হারানোর ভয়ে রক্ষিতার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। অটলের বন্ধ-বান্ধব বিশেষ করে নিমচাঁদ এসব কর্মকাণ্ডে  সাহায্য করে। এক পর্যায়ে কাঞ্চন অটলকে পরিত্যাগ করে। অটলের বন্ধুরা মানুষের হাতে নিগৃহীত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরাপান ও বেশ্যাসক্তি এক শ্রেণীর যুবকের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। ‘সধবার একাদশী’ সে সামাজিক বিপর্যয়ের কাহিনী । সধবার একাদশী প্রহসনের ‘কেনারাম’ চরিত্রের মধ্য দিয়ে তৎকালীন শিক্ষিত শ্রেণীর নৈতিক অবস্থান এবং বিচার ব্যবস্থার হাস্যকর পরিচয় ফুটে উঠেছে ।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী

সধবার একাদশীতে উল্লেখযোগ্য চরিত্রঃ জীবনচন্দ্র, গোকুলচন্দ্র, অটলবিহারী, ইয়ারভোলা, রামমানিক্য, নিমচাঁদ, কেনারাম, সৌদামিনী, গিন্নী, কাঞ্চন ইত্যাদি।

দীনবন্ধু মিত্রের প্রহসন মূলক রচনা – বিয়ে পাগলা বুড়োঃ
দীনবন্ধু মিত্রের প্রহসন মূলক রচনা – বিয়ে পাগলা বুড়োর প্রকাশকাল ১৮৬৬।  এটি হাস্যরসাত্মক নাটক।এই রচনা প্রসঙ্গে  বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন, ” এই নাটক কোন জীবিত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিয়া লিখিত হইয়াছিল।”  এ নাটকটি প্রথম অভিনিত হয় ১৮৭২ সালে। উল্লেখযোগ্য চরিত্রে অভিনয় করেন নসিরাম, রতা, রাজীব, রাজমণি, কেশব, বৈকুণ্ঠ ইত্যাদি।

দীনবন্ধু মিত্রের জীবনী, দীনবন্ধু মিত্রের নাটক- নবীন তপস্বিনী

দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় নাটক নবীন তপস্বিনী। এটির প্রকাশকাল ১৮৬৩ সাল । এই নাটকে তার সমসাময়িক মধুসূদনের প্রভাব বহুলাংশে চোখে পড়ে। যদিও এই নাটকের নাট্যবস্তু নেহাতই মামুলি – কতকটা রূপকথার তুল্য। রাজা রমণীমোহন মাতা ও দ্বিতীয়া পত্নীর প্ররোচনায় জ্যেষ্ঠা মহিষীকে পরিত্যাগ করলে গর্ভবতী রানি গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসিনীর জীবন অবলম্বন করেন। যথাকালে তার বিজয় নামে এক পুত্রসন্তান জন্মে। বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিজয় সভাপণ্ডিত বিদ্যাভূষণের কন্যা কামিনীর প্রেমে পড়ে। এদিকে কামিনীর সহিত রাজা রমণীমোহনের বিবাহের তোড়জোড় চলছিল। ঘটনাচক্রে বিজয়ের পিতৃপরিচয় উন্মোচিত হল। রাজা জ্যেষ্ঠা মহিষীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনলেন। বিজয় ও কামিনীর শুভ পরিণয় সম্পন্ন হল। নবীন তপস্বিনী অত্যন্ত অপরিণত এক নাট্যরচনা। কাহিনির উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করতে না পারায় সমগ্র বিষয়টিই এখানে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত। এমনকি যার নামে এই নাটকের নামকরণ ‘নবীন তপস্বিনী’, সেই কামিনীর চরিত্রটি পর্যন্ত নাটকে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। দীর্ঘ ক্লান্তিকর বক্তৃতা ও মাঝে মাঝে পয়ার ও সংস্কৃত শ্লোকের ব্যবহার নাটকের গতি শ্লথ করেছে। একমাত্র জলধরের কৌতুকরস এই নাটকের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যদিও এটি শেক্সপিয়রের হলফাস্টের অনুকরণের রচিত।

 উল্লেখযোগ্য চরিত্র: রমণীমোহন, বিজয়,মালতী,মল্লিকা, জলধর, রতিকান্ত এবং কামিনী।

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা  লীলাবতী

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা  লীলাবতীর প্রকাশকাল- ১৮৬৭ সাল ।  লীলাবতী একটি সামাজিক নাটক। এর কাহিনীজাল অত্যন্ত জটিল। কলকাতার সম্পন্ন গৃহস্থ হরিবিলাস চট্টোপাধ্যায় ও তার সন্তানদের দ্বন্দ্ব জটিল জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে এই কাহিনী। ললিত ও লীলাবতীর প্রণয় কথাই নাটকের মূল উপজীব্য। তবে সাধারণ নাগরিক জীবনের এমন রোম্যান্টিক উপস্থাপনায় নাটকের বাস্তবতা আদৌ রক্ষিত হয়নি। যদিও এই নাটকে বিষয়বস্তুর রহস্যঘনতা আছে, সংঘাত ও আকস্মিকতা আছে, এমনকি শেষের দিকে যথেষ্ট গতিও সঞ্চারিত হয়েছে। কিন্তু আদিরসভিত্তিক কাহিনী ও রসসৃষ্টির ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত কাহিনীকে স্বার্থকতাদান থেকে বঞ্চিত করেছে।

উল্লেখযোগ্য চরিত্রঃ শ্রীনাথ, হেমচাঁদ, নদের চাঁদ, সারদা সুন্দরী, ললিত এবং লীলাবতী।

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা জামাই বারিক

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা জামাই বারিকের প্রকাশকাল ১৮৭২সাল । এটি একটি হাস্যরসাত্মক নাটক রম্য রচনা।

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা জামাই বারিক ১৮৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, “জামাই বারিকের দুই স্ত্রীর বৃত্তান্ত প্রকৃত।” এই নাটকের অন্তর্গত বিন্দুবাসিনী ও বগলার কলহ দৃশ্যটি ১৯২৬ সালে ‘জেনানাযুদ্ধ’ নামে প্রকাশিত হয়।

উল্লেখযোগ্য চরিত্রঃ বিজাবল্লভ, অভয়কুমার, কামিনী, বগলা, বিন্দুবাসিনী ইত্যাদি।

 

দীনবন্ধু মিত্রের রচনা – কমলে কামিনী

কমলে-কামিনী দীনবন্ধু মিত্রের দ্বিতীয় রোম্যান্টিক নাটক । এই নাটকটির প্রকাশকাল ১৮৭৩ সাল । কমলে-কামিনী তার জীবনের শেষ নাট্যকীর্তিও বটে। এই নাটক রচনার অব্যবহিত পূর্বে কর্মসূত্রে দীনবন্ধু কাছাড়-মণিপুর অঞ্চলে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। সেই অঞ্চলের পটভূমিকায় এক কাল্পনিক কাহিনির আধারে কমলে-কামিনী রচিত। কাছাড়ের রাজসিংহাসনে ব্রহ্মরাজের শ্যালক অধিষ্ঠিত হলে মণিপুররাজের সহিত ব্রহ্মরাজের যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই সময়ে মণিপুররাজ শিখণ্ডীবাহনের প্রেমে পড়েন ব্রহ্মরাজকুমারী রণকল্যাণী। এই প্রেমকাহিনিই মূল নাটকের উপজীব্য। এই নাটকে এমন কিছু নাট্যদৃশ্য আছে যা মঞ্চে অভিনয় করা দুরূহ। আবার হাস্যরস সৃষ্টিতেও দীনবন্ধুর ব্যর্থতা এই নাটকের নাট্যরস অনেকাংশে ক্ষুণ্ণ করেছে । নাটকটি ১৮৭৩ সালের ২০ ডিসেম্বর কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটানে সর্বপ্রথম অভিনীত হয়।

উল্লেখযোগ্য চরিত্রঃ রাজা, সমরকেতু, শশাঙ্কশেখর, গান্ধারী, সুশীলা, সুরবালা ইত্যাদি।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.