শেখ হাসিনা মনে করেন, বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর বাস্তবতায় সড়কের পানি নিষ্কাশনে খালের কোনো বিকল্প নেই।
পানির প্রবাহ অব্যাহত রাখতে এখন হাওর এলাকায় মাটি ভরাট করে কোনো সড়ক নির্মাণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “হাওর এলাকায় মাটি ভরাট করে কোনো রাস্তা তৈরি হবে না। পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। বন্যার সময় অনেক রাস্তা ভেঙ্গে যায়, যেখানে রাস্তা ভেঙ্গে যাবে সেখানে মাটি ভরাট হতে দেবেন না। সেখানে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ করেছি। কারণ আবার বন্যা হলে আবার বন্যা হবে, সেসব মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।
শনিবার ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাওর এলাকার উন্নয়ন নিয়ে এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থেকে হরবুকের মিঠামন হয়ে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত 29.73 কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি 8 অক্টোবর, 2020 তারিখে শুরু হয়েছিল। হাওরের বিশাল জলরাশির মধ্যবর্তী সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হাওরবাসীর চলাচলও সহজ হয়েছে। কিন্তু বর্ষাকালে এই সড়কে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন বিশ্বের অন্যান্য দেশ সড়ক নির্মাণে কম খরচ করে, বাংলাদেশ কেন বেশি ব্যয় করে? আমি মনে করি যারা এই কথা বলে তাদের বাংলাদেশের ভূমি সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই।
“আমাদের মাটিকে দোআঁশ মাটি বলা হয়, যদি আমরা টেকসই কিছু করতে চাই, তাহলে আমাদের মাটি ঠিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।”
প্রয়োজনে খালের উপর দিয়ে উড়ে যান
জলাধার ধ্বংস না করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি একটি সুন্দর বড় পুকুর দেখেছি, আপনি তার ভিতরে একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। আমার পরে যারা এসেছিল তাদের আমি বাতিল করেছি। আমার আসার আগে এই ঢাকা শহরে অনেক পুকুর বিলীন হয়ে গিয়েছিল। ওই এলাকার সমস্ত জল কোথায় যাবে?”
শেখ হাসিনা মনে করেন, বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুর বাস্তবতায় সড়কের পানি নিষ্কাশনে খালের কোনো বিকল্প নেই।
“পান্থপথের একটি বিল, বর্ষাকালে সেখানে জল জমে থাকে। একটা খাল ছিল। বক্স কালভার্টে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। সেই পানি নিষ্কাশনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এটা (বক্স কালভার্ট) আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি মনে করি আমাদের খোলা খাল থাকবে। প্রয়োজনে সেখানে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করব। নীচে খাল, উপরে রাস্তা।”
দেশের বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ৯৬ বছরে দেশের কী হয়েছে তা আপনারা জানেন। বিদ্যুতের জন্য হাহাকার। মাত্র ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। 4600 মেগাওয়াট। তারপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে কী হলো? এটি 4600 এর নিচে ছিল। সেই থেকে শুরু করে আজ আমরা ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সফল হয়েছি।
“আমাদের লক্ষ্য হল আমরা 2030 থেকে 41 সালের মধ্যে কতটা উৎপাদন করতে পারি তা দেখা। আমাদের লক্ষ্য একচল্লিশ বছরের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সে অবস্থায় প্রকৌশলীদের গবেষণা দরকার।
প্রকৌশলীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, কীভাবে আমরা জ্বালানি উদ্ভাবন করতে পারি, কীভাবে কম খরচে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যেতে পারি, কীভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়, এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে।
ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইইবি মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি’। এই সম্মেলনের বিশেষত্ব হলো ‘দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফর ট্রান্সফর্মিং টেকনোলজি ড্রাইভেন স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার। দেশের প্রাচীনতম পেশাজীবী সংস্থা ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) এটি ৬১তম সম্মেলন।