পাকিস্তান ক্রিকেটে বোলারদের আধিপত্য। ফজল মাহমুদ থেকে শুরু করে ইমরান খান, সরফরাজ নওয়াজ, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস থেকে শোয়েব আখতার। এমনকি শোয়েব আখতারের পরে, মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমিরের মতো কিছু বিপজ্জনক ফাস্ট বোলার পাকিস্তান দলে এলেও মাঠের বাইরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কারণে তাদের নাম আরও বেশি বিখ্যাত ছিল। পাকিস্তান দলে যে ভালো ব্যাটসম্যানের জন্ম হয়নি তা নয়। হানিফ মোহাম্মদ থেকে শুরু করে জহির আব্বাস এবং ইনজামাম উল হক পর্যন্ত বিভিন্ন নাম রয়েছে। তা সত্ত্বেও বোলারদের কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তান দলকে বেশি বিপজ্জনক মনে করা হয়। এশিয়ার দেশগুলোতে যখনই পাকিস্তান দল মাঠে নামে, তখনই বলা হতো আসল প্রতিযোগিতা তাদের বোলারদের সঙ্গে।

ভারতের প্রেক্ষাপটে, কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছিল যে ম্যাচে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ভারতীয় ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানি বোলিংয়ের মধ্যে। এমনকি 14 বছর পর, যখন ভারতীয় দল 2004 সালে পাকিস্তান সফর করেছিল, সেই সিরিজটি শচীন এবং শোয়েবের নামে খালাস করা হয়েছিল। পাকিস্তানে এখনও শাহীন শাহ আফ্রিদির মতো বিশ্বমানের বোলার রয়েছে। কিন্তু এখন তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি যখন টেস্ট সিরিজে হাজির হন, অস্ট্রেলিয়া তাকে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত করে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম দুই ম্যাচেই জিতেছিল নিউজিল্যান্ড দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান দল এক বা দুটি ম্যাচ জিততে পারে। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন উঠবে পাকিস্তানের বোলিংয়ে কি আর আগের মতো ধার নেই? পাকিস্তানি বোলারদের ‘কিলার ইন্টিউশন’ বা আঘাত করার ক্ষমতা কি এখন হারিয়ে গেছে?

হুঙ্কার কেন আগের মত মনে হয় না?

ইতিহাসে খুব বেশি অনুসন্ধান করার দরকার নেই। বর্তমান ফলাফল এই প্রশ্ন বিতর্কের জন্য যথেষ্ট. ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি পাকিস্তান দল। সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া শীর্ষ ১০ বোলারের মধ্যে পাকিস্তানের মাত্র একজন বোলারের নাম ছিল। শাহিন শাহ আফ্রিদি নিয়েছেন ১৮ উইকেট। যদি আমরা সেরা ইকোনমি রেট নিয়ে কথা বলি, শীর্ষ 25 বোলারদের মধ্যে পাকিস্তানের একজন বোলারও ছিল না। মানে পুরো ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা বেশ ভালো রান দিয়েছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও পাকিস্তানি বোলিংয়ের অবস্থা দেখেছেন সবাই।

৩ টেস্টের সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় সেরা ৫ বোলারের মধ্যে ৪ জন অস্ট্রেলিয়ার। আমির জামালই একমাত্র পাকিস্তানি বোলার যিনি সেরা পাঁচে ছিলেন। শাহীন শাহ আফ্রিদি ২ টেস্ট ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের বোলাররা মাত্র 16 রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচের দখল হারিয়ে ফেলে। লিড হাতে আসতেই টেস্ট ম্যাচ পিছিয়ে যায় এবং অস্ট্রেলিয়াকে ৭৯ রানে হারের মুখে পড়তে হয়।

এবার আসা যাক বর্তমান টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়েও। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২২৬ রান করে কিউই দল। এমনকি দ্বিতীয় ম্যাচেও এক সময় স্কোর দুইশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১৯তম ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে কিউই দল। যার কারণে পাকিস্তানি বোলারদের কিছুটা সম্মান রক্ষা হয়। তবে ম্যাচের ফল তখনও পাকিস্তানের পক্ষে যায়। এখন সিরিজ বাঁচাতে পাকিস্তানি বোলারদের বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে এই পুরো বিষয়টির জন্য পাকিস্তানের দুর্বল ফিল্ডিংকেও দায়ী করা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে খুব কমই এমন কোনো ম্যাচ হবে যেখানে পাকিস্তান দল ১-২টি ক্যাচ ফেলেনি। ক্যাচ মিস করা শুধু ম্যাচের ফলাফলকেই প্রভাবিত করে না, বোলারদের মনোবলের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা ধারাবাহিকভাবে দেখা গেছে।

পাকিস্তানি বোলাররা কোথায় ভুল করছে?

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পিচ অনুযায়ী সঠিক লাইন-লেংথ বজায় রেখে বোলিং করতে দেখা যায় না। এ কারণেই নতুন বলে উইকেট পাচ্ছেন না পাকিস্তানি বোলাররা। যদিও আমরা পাচ্ছি, তা খুবই কম। পাকিস্তানি বোলাররা মাঝের ওভারে উইকেট পান কিন্তু তখনই যখন প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা তাদের কাজ করে ফেলেন। সাম্প্রতিক ম্যাচে এমনও দেখা গেছে যে পাকিস্তান বোলাররা সম্পূর্ণভাবে পেসারে মনোযোগী। পুরো শক্তি নিয়ে দ্রুত বোলিং করলেও সাফল্য পাননি। এর কারণ হলো, ব্যাটসম্যানরা বোলারদের গতিকে সঠিক পথে দেখিয়ে রান করেছেন।

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যেও নানা পরিকল্পনার অভাব ছিল। প্রতিপক্ষ দলের বিপক্ষেও একইভাবে বোলিং করতে থাকেন। এটাও বোধগম্য যে শাহীন শাহ আফ্রিদি কেন ইফতেখার আহমেদকে বোলিং করলেন না? ঘরোয়া ক্রিকেটে একটানা বোলিং করে যাচ্ছেন ইফতেখার আহমেদ। এছাড়া আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোলিং করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। মনে রাখবেন, এশিয়া কাপে গত বছর এক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন ইফতেখার আহমেদ। মনে করা হচ্ছে এই ম্যাচের পর ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা আর অশ্বিনকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আচ্ছা, তথ্য দিয়ে বলা মুশকিল কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজে অধিনায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদি কেন ইফতিখার আহমেদকে বোলিং করছেন না? বিষয়টি বোঝার বাইরে। এটাও একটা বড় আলোচনা যে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে মানুষ শুধু স্পিড আর সুইংয়ের দিকেই নজর দিচ্ছে। সঠিক বোলিং গতির উপর কোন জোর নেই। একইসঙ্গে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে বোলিংয়ে ‘ভেরিয়েশন’ আনা খুবই কঠিন।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.