চক্রের কারণে বারবার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কাজ বন্ধ থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর শেষ সুযোগ ছিল ৩১ মে। কিন্তু ভিসা ও চাকরির চিঠি পেয়েও সেখানে যেতে পারেননি লাখ লাখ কর্মচারী।

এরই মধ্যে গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন আসছে, তাতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশি এজেন্সি শ্রমিকরা প্রতারিত হয়েছেন বললে ভুল হবে না। এর আগে ২০০৯, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দেশের শ্রমবাজার বন্ধ ছিল। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চারবার বন্ধ হওয়া আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। বন্ধ এবং খোলার এই অনুশীলনে, ভাগ্য-সন্ধানী যুবক যারা সম্পত্তি বিক্রি করে বা ঋণ নেয়, চক্র ফাও উপার্জন করেও বিদেশে যায়।

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রতিটি শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা আয়োজক দেশের দায়িত্ব। মালয়েশিয়া বা অন্যান্য দেশ সেই দায়িত্ব কতটা পালন করেছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমি মনে করি, এই মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে বাংলাদেশেরও কিছু করতে হবে। অন্তত সরকার আয়োজক দেশগুলোর সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে।

সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তই দায়ী। মালয়েশিয়া ১৫টি দেশ থেকে শ্রমশক্তি নিয়ে আসে। এই দেশগুলির মধ্যে, 14, মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থা নির্বাচনের শর্ত দেয়নি। ওইসব দেশের সব সংস্থাই কর্মী পাঠাতে পারে। আর বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর জন্য কয়েকটি এজেন্সি নির্বাচন করেছে দেশটি। বাংলাদেশ এতে রাজি হয়েছে। আর সেই সুযোগে উভয় দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিরা মালয়েশিয়াগামী প্রতিটি যুবকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

বেস্টিনেট, যা ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) সফটওয়্যারের মালিক, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংস্থাকে সন্তুষ্ট করে জনশক্তি রপ্তানি করতে হয় বাংলাদেশের সংস্থাগুলোকে।

প্রশ্ন হলো, যারা জমি বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে এজেন্সির দাবি পূরণ করতে পারেনি তাদের কী হবে? সংস্থাগুলো স্বেচ্ছায় তাদের টাকা ফেরত দেবে না। এমতাবস্থায় সরকারকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে তারা টাকা ফেরত দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, সরকার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে যে সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যারা ভিসা ও চাহিদাপত্র পেয়েছেন তাদের দেশত্যাগের ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না।

মালয়েশিয়ার অনেক এজেন্সি ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে লোক নিয়োগ করে। এ ধরনের চক্রের কবলে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের সংস্থাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কেউ তার মতামতের সাথে একমত হতে পারে না। যেহেতু মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মানুষ পরিবহনের চুক্তি রয়েছে, তাই তাদের দায় এড়ানোর কোনো উপায় নেই। সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত বা মালয়েশিয়ার এজেন্সির স্বেচ্ছাচারিতার খেসারত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বহন করতে হবে এমনটা হতে পারে না।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.