ভারতের জয়ের অনেক ঘণ্টা কেটে গেছে। দুই দলই এখন আগের ম্যাচের পরিবর্তে পরের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছে। ভারতের পরের ম্যাচ আফগানিস্তানের অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিরুদ্ধে। যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে পরের ম্যাচ খেলতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে 102 রানে হারিয়েছে। এছাড়া এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্কোর করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেট হারিয়ে ৪২৮ রান করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে কুইন্টন ডি কক, রাসি ভ্যান ডের ডুসেন এবং এইডেন মার্করামের সেঞ্চুরি।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার জন্য এই ম্যাচটিও কঠিন কারণ গত মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে হেরেছে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ চারটি জয় নিয়ে অন্য কোনো সময় আলাদাভাবে আলোচনা করব, তবে আপাতত আপনাদের বলে রাখি যে দক্ষিণ আফ্রিকান দল শেষ চারটি ম্যাচে 100 রানের ব্যবধানে জিতেছে। 111, 164, 122 এবং 102 রানে এই জয় অর্জিত হয়। সব মিলিয়ে পরের ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার জন্য কঠিন। সেই ম্যাচেও যদি হারে, তাহলে প্রথম দুই ম্যাচে টানা পরাজয় তাদের ম্যাচে আরও সমস্যায় ফেলবে। এবার ফিরে আসা যাক ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া দলের যে ভুলটা পরাজয়ের কারণ হয়েছিল।
ম্যাচ হাতে রেখেই হেরেছে ক্যাঙ্গারুরা
ভারতীয় দলের কাছে 200 রানের টার্গেট ছিল। প্রথম ওভারেই ইশান কিষাণকে আউট করেন মিচেল স্টার্ক। ‘গোল্ডেন ডাক’-এর শিকার হলেন ইশান। এর পর দ্বিতীয় ওভারে বিধ্বস্ত হন হ্যাজেলউড। ওভারের তৃতীয় বলে রোহিত শর্মাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। এটি একটি অবিশ্বাস্য বল ছিল। এরপর একই ওভারের শেষ বলে শর্ট কভারে শ্রেয়াস আইয়ারের হাতে ক্যাচ আউট হন তিনি। এটি শ্রেয়াস আইয়ারের একটি ভুল শট ছিল। ভারতের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ২৩ রান। শীর্ষ তিন খেলোয়াড় খাতা না খুলেই আউট হয়ে গেলে এমন খারাপ শুরু দেখাটা অস্বাভাবিক। এখন ক্রিজে রয়েছেন বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল। এক একটি রানের স্কোর। মাঝখানে দু-একটা ভালো শট মারেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ১২ রানে থাকা অবস্থায় হ্যাজেলউডের বলে ভুল শট খেলেন তিনি। বল বাতাসে ছিল। ক্যাচটা কঠিন না হলেও ভুল করেছিলেন মিচেল মার্শ। বিরাটের ক্যাচ ফেলে দেন তিনি। ক্রিকেট ভক্তরা বলছেন, এই ক্যাচের কারণেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ হেরেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমনটা নয়, এই ক্যাচ নিতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিজেদের দখল আরও শক্ত করতে পারত। আসল ভুলটা হয়েছে পাওয়ার প্লের পর। দশম ওভার শেষ হতে না হতেই মাঠের পজিশন খুলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া দল। যার কারণে লোকসান হয়েছে।
বিরাট ও কেএল রাহুল হাত খোলার সুযোগ পেয়েছেন
প্যাট কামিংস চাইলে প্রথম ১০ ওভারের পরেও ফিল্ডারদের ৩০ গজের মধ্যে রাখতে পারতেন। এটা করলে বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুল সিঙ্গেল নিতে অসুবিধা হবে। রান করার মানসিক চাপ তাকে বায়বীয় শট খেলতে নিয়ে যাবে। এটি করতে তাকে ‘ঝুঁকি’ নিতে হয়েছিল। যা অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য উপকৃত হতো। সহজ কথা হলো শট যত বড় হবে, উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কিন্তু প্যাট কামিংস তা করেননি। তিনি মাঠ খুলে 30-গজের বৃত্তের বাইরে খেলোয়াড়দের পাঠান। পাওয়ার প্লের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২ জন ফিল্ডার ৩০ গজ ব্যাসার্ধের বাইরে থাকতে পারবেন। ঠিক আছে, মাঠ খোলার পরে, বিরাট কোহলি এবং কেএল রাহুলের জন্য সিঙ্গেল-ডাবল নেওয়া সহজ হয়ে গেল। ধীরে ধীরে তার দৃষ্টিও স্থিতিশীল হতে থাকে। ধীরে ধীরে হলেও স্কোরবোর্ড নড়তে শুরু করেছে। এটাই চেয়েছিলেন বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল। এর পর তিনি 150 রানের জুটি গড়েন এবং ভারতীয় দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। 12তম ওভারে যখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বল করতে আসেন, রবি শাস্ত্রী ধারাভাষ্য করছিলেন। এ কথাও বলেছেন তিনি। এই ভুলই হয়ে ওঠে পরাজয়ের আসল কারণ।
টার্গেট ছোট ছিল তাই রিস্ক নেননি
অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের কৌশল যারা ‘রক্ষা’ করছেন তারা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া মাত্র 200 রানের টার্গেট দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে রানের গতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়েছে অধিনায়ককে। সিঙ্গেল ঠেকাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চার মারতে দেওয়ার মতো ‘বিলাসিতা’ তাদের ছিল না। তবে এর অন্য দিকটাও বুঝুন। ২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা অর্থাৎ বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল বড় শট খেলার ঝুঁকি নিতে পারেননি। কারণ আরও একটি উইকেট পড়লে ম্যাচটি পুরোপুরি পিছলে যেত। যদিও হার্দিক পান্ড্য, রবীন্দ্র জাদেজা এবং আর অশ্বিনের মতো খেলোয়াড়রাও রান করতে পারেন, তবে অস্ট্রেলিয়ার হাত উপরে থাকবে। ঠিক আছে, কামিংস মাঠে নামার সাথে সাথে বিরাট এবং কেএল রাহুলের প্রয়োজন সিঙ্গেল-ডাবল। ক্রিজে সময় কাটাতে হয় তাকে। তাকে সুযোগ দেন প্যাট কামিংস। এখানে ম্যাচ হেরেছে প্যাট কামিংস।