প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার (২১ জুন) রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে আসছেন। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। একই সঙ্গে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলস্বরূপ, সফর একে অপরের প্রতি দৃঢ় বন্ধুত্বের লক্ষণ দেখায়।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গীরা ২১-২২ জুন নয়াদিল্লিতে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি শুক্রবার দুপুর ২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২২ জুন সকালে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র অভিবাদন নেবেন এবং গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং ভিজিটিং বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
একই দিন হায়দ্রাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক হবে। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা এবং সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং উভয় নেতার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
সফরের প্রথম দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরদিন বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে ১২ থেকে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চুক্তি বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এখনো নবায়ন করা বাকি। দুই পক্ষই প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে সফরের বিভিন্ন দিক চূড়ান্ত করতে কাজ করেছে।
এই সফরে ভারতের ক্রেডিট লাইন বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি এবং বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনায় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়াও কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভে বাংলাদেশের সদস্যপদ, তিস্তা মেগা প্রকল্পে ভারতের আগ্রহ, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দরের সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ, দ্বিপাক্ষিক ভিসা ইস্যু, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (SEPA) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উপ-আঞ্চলিক শক্তি সহযোগিতা, জাপানের বিগ-বি পরিকল্পনা, সংযোগ, জ্বালানি, সহযোগিতার বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনা হবে। এ ছাড়া মহাকাশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণ, ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া গত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও ঋণ সহায়তার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।