পান্থকুঞ্জ পার্ক। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, বাংলামোটর জংশনে এক টুকরো সবুজের সমারোহ। কয়েক বছর আগেও এখানে সারি সারি গাছ ছিল। পার্কটি সকালের ব্যায়াম এবং মর্নিং ওয়াক এবং বিকেলে গসিপে ভিড় ছিল। ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিল। ডালে ডালে পাখি কিচিরমিচির করছিল।
এগুলো প্রায় অতীতের ব্যাপার। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ পান্থকুঞ্জ পার্ক থেকে হাতিরঝিল হয়ে পলাশী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পার্কের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা সেই কাজে কোরবানি হয়। অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সবুজ জীবন নেই। কেউ কেউ জরাজীর্ণ অবস্থায় বেঁচে থাকে। পার্কের ভেতরে এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। গাছ কাটা ও খুঁটি বসানোর কারণে সবুজের উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। পার্কের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় নেই।
শুধু পান্থকুঞ্জ পার্ক নয়, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটে অবস্থিত নগরবাসীর বিশ্রামস্থল আনোয়ারা উদ্যানও বিলীন হয়ে গেছে। এর মালিকানা মেট্রোরেল। পুরো পার্কটি এখন গাছপালা শূন্য। সবুজ বাগান আর সবুজ নেই। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) আনোয়ারা উদ্যানে একটি স্থায়ী স্টেশন প্লাজা স্থাপন করতে চায়, তবে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রয়োজনের কারণে এটি অস্থায়ী ব্যবহারের জন্য নেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, মেট্রোরেল স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য ডিএমটিসিএলকে অনুমতি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। পার্কটি দখলের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বাসিন্দারা। পার্কটি ফিরে পেতে মানববন্ধনও করা হয়।
ফার্মগেটের তেজতুরী এলাকার বাসিন্দা রুমেল রহমান বলেন, আনোয়ারা বাগানে প্রায় দুই শতাধিক গাছ ছিল। এখন সব শেষ। পার্কে কিছু সময় বসে থাকা, আরাম করা এবং কথা বলা সবই সম্ভব। সকালে আমার বন্ধুরা এসে ব্যায়াম করত। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর পর পার্কটি দখল হয়ে যায়। এরপর শুনেছি কাজ শেষ হলে পার্কটি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের দেওয়া সাইনবোর্ডও রয়েছে। কিন্তু এখানে স্টেশন প্লাজা তৈরি হলে এই পার্ক চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।
পার্কে স্টেশন প্লাজা নির্মাণে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম স্টেশন প্লাজা নির্মাণের উদ্যোগকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, ফার্মগেটের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় খোলা বাগান থাকবে না এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
যারা এসব পার্ক সংস্কারের পরিকল্পনা করছেন তারা আসলে পরিবেশবান্ধব নয়। বর্তমানে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আনোয়ারা পার্ক ও পান্থকুঞ্জ পার্ক শুধুমাত্র পৌর কর্পোরেশনের অবহেলায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পার্ক হারানো মানে সবুজতা হারানো। এতে আমরা সবাই ভুগছি- বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির
আনোয়ারা গার্ডেন সংক্রান্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক মো. আব্দুল বাকী মিয়া বলেন, ‘এটা এত বড় প্রজেক্ট, কাজে গেলে অবশ্যই কিছু সমস্যা হবে। আমরা আমাদের লাগেজ রাখার কোন জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে গণপূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলে আমাদের এখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা প্রয়োজন, তবে সেখানে সাড়ে ৮ শতাংশের কম। এসব কারণে ঢাকার বাসিন্দারা আশেপাশের সবুজ এলাকার তুলনায় গ্রীষ্মকালে বেশি গরম অনুভব করে এবং বেশি কষ্ট পায়।