টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে ঢাকার সাড়ে আট লাখের বেশি ভবন ধসে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের প্রায় ৪০ শতাংশ। সরাসরি মারা যেতে পারে অন্তত দুই লাখ মানুষ। 300,000 এর বেশি মানুষ আহত হতে পারে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৪ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে।

‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট: রাজউক পার্ট’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারের আগে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলিকে জরুরী ভিত্তিতে চিহ্নিত করে শক্তিশালী (রেট্রোফিটিং) করতে হবে। বিল্ডিং রেগুলেশন মেনে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ১২ জুন পালিত হচ্ছে ভূমিকম্প সচেতনতা দিবস। ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট: রাজউক পার্ট’ এর প্রকল্প পরিচালক এবং রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও নকশা) আব্দুল লতিফ হেলালী বলেন, “আমরা আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট নিয়ে ঢাকায় কাজ শুরু করেছি। প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে জুনে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের সুফল পেতে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োজন।

আমরা এই প্রকল্পটিকে ‘আরবান সেফটি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট’ নামে একটি ইনস্টিটিউট করতে চাই যেখানে আধুনিক গবেষণাগার থাকবে। আমরা চাই স্বাধীন ও স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমরা সারাদেশে কাজ করব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে ইনস্টিটিউটে রূপান্তর করতে হবে। কিন্তু স্বাধীন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে এর প্রশিক্ষিত জনবল, যন্ত্রপাতি, উপকরণ সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।

এটা মন্ত্রণালয় বা রাজউকের অধীনে থাকবে না।
বিপজ্জনক ভবন ভাঙা ও শক্তিশালী করার নির্দেশ মানা হচ্ছে না

আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় রাজউক ২২৯টি সরকারি ও আধা-সরকারি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ৪২টি ভবন ভেঙে ফেলা হবে। 187টি ভবন মজবুত করতে হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, ‘৪২টি ভবন ভাঙার বিষয়ে আমরা সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু ভাঙার উদ্যোগ নিচ্ছে না তারা। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ধীর হও

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভূমিকম্প এবং অন্যান্য দুর্যোগের সময় অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান এবং জরুরি যোগাযোগের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 2,276 কোটি টাকার প্রকল্প, সম্পূর্ণরূপে সরকারের অর্থায়নে, 2020 সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এর আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ১.১৭ শতাংশ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক কাজী শফিকুল আলম বলেন, ডলার সংকট ও অন্যান্য কারণে এত দিন প্রকল্পটি কাঙ্খিত গতিতে এগোতে পারছে না। তবে গত চার মাসে এই প্রকল্পে গতি এসেছে। বর্তমানে এর অগ্রগতি ১২ থেকে ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটি একটি ধীরগতির প্রকল্প। কিন্তু (এখন) অগ্রগতি হচ্ছে। অনেক মালামাল কেনা হচ্ছে।

অধিদপ্তর জানায়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কিছু যন্ত্রপাতি (খননকারী, মোটর গাড়ি, ক্রেন, কাঁটাচামচ, জেনারেটর ইত্যাদি) কেনা হয়েছে। এসব মেশিন পৌর কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘সরকার তার পরিকল্পনা বা বাজেটে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভূমিকম্প দ্বারা আচ্ছাদিত, কিন্তু শুধুমাত্র প্রাণহানি বা হতাহতের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, অন্যান্য উপায়েও। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত ও দক্ষ লোক ঢাকা শহরে বাস করে। আগে থেকে প্রস্তুতি না নিলে বড় ভূমিকম্প হলে আমরা শিক্ষিত ও দক্ষ লোক হারাবো। এরপর পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করতে হবে বাংলাদেশকে।

সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘স্মার্টফোন অ্যাপের মাধ্যমে আমরা ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকারী দল কোথায় পাঠাতে হবে তার একটি মানচিত্র তৈরি করতে পারি। ভূমিকম্পের পরে, লোকেরা অ্যাপটিতে প্রতিক্রিয়া জানাবে বা এটি কতটা গুরুতর তা বলবে। যদি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ধাক্কার পরিমাণ জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন এলাকায় তাদের উদ্ধারকারী কর্মী এবং চিকিৎসা দল পাঠাবেন। “যেহেতু এই মহানগর রাতারাতি রূপান্তরিত হতে পারে না, তাই আমাদের ভূমিকম্পের প্রাথমিক জ্ঞান, সচেতনতা এবং করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত ড্রিল এবং অনুশীলন প্রয়োজন।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষণ, সংবেদনশীল ও অনুশীলন করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিল্ডিং নিজেই যদি নিরাপদ ও মজবুত না হয়, তাহলে ভূমিকম্পের সময় ভবনের দেয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা বা ভবনের কোনো তুলনামূলক নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে আমরা যা বলি- এসব কিছু ধরে রাখবে না। ইমারত মজবুত করে এই কথাগুলো বললে ঠিক হয়। আমি বিশ্বাস করি, এখন আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা উচিত। তারপর শক্তির দিকে এগোতে হবে।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.