বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ আজ দুপুরে রাজ্যে প্রথম মৃত্যু হল করোনা আক্রান্ত রোগীর । আর তার পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর সৎকার কিভাবে করা হবে সে বিষয় নিয়ে । কারন করনা ভাইরাস একটি মৃত দেহ থেকেও অতি সহজেই অন্য জীবিত মানুষের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে । এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-এর নিয়ম মেনে কিভাবে সৎকার করা হবে একজন করোনা আক্রান্ত মৃত দেহের তার গাইডলাইন প্রকাশ করল স্বাস্থ্য মন্ত্রক । আর সেই নির্দেশিকা এক বার পড়লেই বোঝা যাবে মৃতের পরিজনদের ঠিক কতখানি ভারী পাথর বুকে চাপিয়ে এই কাজটি করতে হবে !

করোনা আক্রান্ত একটি মৃতদেহ সৎকার করার সময়ও থাকতে হবে অতি সাবধান এবং সতর্ক । কারন যে কোন সময়  সংক্রমণের  আশঙ্কা থাকবে । ফলে যারা সৎকার করবেন বা যেখানে সৎকার হবে, পুরো বিষয়টিই ঝুঁকির মুখে পড়বে। এবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে গাইডলাইন প্রকাশ করল সেখানে কি বলা হয়েছে দেখে নেওয়া যাক –

  •  কোভিড ১৯ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে মূলত ড্রপলেটের মাধ্যমে। মানুষের শরীরের কফ, থুতু, হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা জলকণাতেই থাকছে এই মারণ ভাইরাস । তাই মৃতদেহের শরীর থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু অসতর্ক হলে বিপদ ।
  • করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে সেই মৃত দেহের  ময়নাতদন্ত এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।কারন মৃতের ফুসফুস থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা সবচেয়ে থেকে যায়। যে চিকিৎসক করবেন, তাঁকে এন ৯৫ মাস্ক, চশমা, গ্লাভস, এপ্রন– সব নিয়ম মেনে অতি সতর্ক হয়ে করতে হবে ।
  • এবার যে পরিজনরা মৃতদেহ বহন করবেন তাঁদের জলনিরোধী এপ্রন, গ্লাভস, মাস্ক পরা জরুরি। থাকতে হবে চশমাও। খুব ভাল করে নিয়ম মেনে হাত ধুতে হবে তাঁদের। ধারালো জিনিস থেকে সাবধানে থাকতে হবে, যাতে কেটে-ছড়ে না যায়। আর মৃতদেহ থাকবে সংক্রমণ মুক্ত আলাদা ব্যাগে । 
  • বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মী ছাড়া করোনা সংক্রামনে মারা যাওয়া মানুষের শেষযাত্রা ও শেষকৃত্য করা যাবে না ।  আইসোলেশন থেকে সৎকারের জায়গায় দেহ নিয়ে যেতে হবে । আর নিয়ে যাবার মৃত দেহ থেকে সময়ে সমস্ত চ্যানেল, নল খুলে ফেলতে হবে দেহ থেকে।
  • মৃত দেহের মুখ এবং নাক ভাল করে বুজিয়ে দিতে হবে, যাতে কোনও ভাবেই রোগীর দেহ থেকে কোনও জলকণা বাইরে না বেরোতে পারে।
  • শেষ দেখা দেখতে হলে আগে ভালভাবে স্যানিটাইজ হতে হবে । আর শুধু মুখের অংশ দেখা যাবে, আর সেটাও বিশেষ ব্যাগে বন্দি অবস্থাতেই ।
  • প্রতি ক্ষেত্রেই দেহটিকে সংক্রমণ-মুক্ত করার জন্য হাইপোক্লোরাইট সলিউশন ব্যবহার করতে হবে।
  • মৃত দেহের যা যা মেডিক্যাল-ওয়েস্ট পড়ে থাকবে, অর্থাৎ ব্যবহৃত তুলো, সিরিঞ্জ– এ সব নিয়ম মেনে নষ্ট করতে হবে।
  • সৎকার স্থানে মনোবিদ উপস্থিত থাকতে হবে । সেখানে মৃতের পরিবারের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে।
  • মৃত দেহ বার করার পরে আইসোলেশনে যা যা রয়েছে, সে সব কিছু সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন দিয়ে ৩০ মিনিট ধরে মুছতে হবে এবং হাওয়ায় শুকোতে দিতে হবে।
  • যে বাহনে করে মৃত দেহ  সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে  দেহটি অন্তত চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ঠান্ডা অবস্থায় রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে । পরে সেই বাহনটিকে ফের জীবাণুমুক্ত করতে হবে নিয়ম মেনে।
  • সকলে একসাথে শেষ দেখা দেখতে পারবে না । আর যারা পারবে তারা মাত্র একবার শুধু মুখটা দেখতে পারবেন ব্যাগ খুলে। তার পরে আবারও স্যানিটাইজ় করতে হবে দেহ, নিজেকেও হতে হবে।
  • সৎকারের সময় কোনও ধর্মীয় মন্ত্রপাঠ বা রীতি পালন করতে চাইলে তা দেহ না ছুঁয়ে করতে হবে । 
  • সৎকার স্থলে জমায়েত থাকবে না । এছাড়া দেহকে স্নান করানো, জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া চলবে না।
  • সৎকারের পরে ছাই বা মাটি সংগ্রহ করা যেতে পারে ধর্মীয় রীতিপালনের উদ্দেশে, তাতে কোনও ঝুঁকি থাকবে না আর।

এবার বলুন সেই অন্তিম যাত্রা একজন পরিজনের কাছে কতখানি বেদনা দায়ক হবে !

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.