জন্ম নিবন্ধন হল একজন ব্যক্তির জন্ম, বয়স, পরিচয় এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা এবং সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য এই শংসাপত্রটি বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশের বেশি অর্থাৎ তিন কোটি মানুষের জন্ম নিবন্ধন নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি, বিবিএস আর্থ-সামাজিক ও জনসংখ্যাগত সমীক্ষা-2023 প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের থেকে পিছিয়ে এবং শহুরে মানুষের তুলনায় গ্রামীণ জনগণের জন্ম নিবন্ধনের হার কম।
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে মোট জনসংখ্যার ৮৩.৬৪ শতাংশ পুরুষের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে। এক্ষেত্রে নারীর হার ৮২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
অর্থাৎ 16.36 শতাংশ পুরুষ এবং 17.92 শতাংশ নারীর জন্ম নিবন্ধন নেই।
জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগ পিছিয়ে এবং চট্টগ্রাম বিভাগ এগিয়ে রয়েছে। বরিশালের মোট জনসংখ্যার ৭৬.৮৫ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন আছে, বাকি ২৩.১৫ শতাংশের নেই।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ মানুষের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে, বাকি ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশের নেই। জেলা হিসেবে ভোলা জেলায় সবচেয়ে কম নিবন্ধন রয়েছে। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৬৭.৮৯ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, আজকাল সবকিছুতেই জন্ম নিবন্ধন সনদ লাগে। এটা ছাড়া কোনো কাজ সম্ভব নয়। স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বয়সের প্রমাণ হিসাবে একটি জন্ম শংসাপত্র উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
কম জন্ম নিবন্ধন হার বিভিন্ন বাধার কারণে। প্রক্রিয়া সহজ করা না হলে এই হার বাড়ানো যাবে না। একই সময়ে, 18 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক, তবে অনেক লোক এখনও এটি থেকে বাদ পড়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ৯৬.৪৫ শতাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এখানেও নারীরা পিছিয়ে।
পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে দেশের মানুষ। পরিসংখ্যান অনুসারে, মোট জনসংখ্যার মাত্র 4.39 শতাংশের পাসপোর্ট রয়েছে। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশের বেশি মানুষের পাসপোর্ট নেই। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পাসপোর্ট রাখার হার প্রায় অর্ধেক।
গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক কিন্তু খুব কম লোকেরই তা আছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মাত্র 2.11 শতাংশের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। অর্থাৎ ১৭ কোটি ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪৮ জনের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী পুরুষদের হার 4.19 শতাংশ, যেখানে মহিলাদের হার মাত্র 0.12 শতাংশ।
জরিপের ফোকাল পয়েন্ট অফিসার নয়ন কান্তি রায় গতকাল কণ্ঠকে বলেন, ‘জনসংখ্যার ১৭ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন নেই। এবং 4 শতাংশের বয়স 18 বছরের বেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া। এই প্রতিবেদনটি আমরা জরিপ চলাকালীন তাদের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা ও বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইনুল বলেন, ‘সবার জন্য পাসপোর্ট আবশ্যক না হলেও প্রত্যেকেরই জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এগুলো ছাড়া সরকারি বাজেট বা নীতি নির্ধারণের তথ্য পাওয়া যায় না। তাই সরকারকে এ বিষয়ে প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর জোর দিতে হবে।