আওয়ামী লীগ নেতা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুল করিম মিন্টু দাবি করেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আন্না হত্যার মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীন। ডিবির হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু গতকাল আদালতে জবানবন্দি দিয়ে হত্যার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেন।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, মিন্টু জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, আন্না হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন। তিনি বাদামের ওস্তাদ। শিমুল ভূঁইয়া হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তিনি শুনেছেন, শাহীনের পরিকল্পনায় আনারকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে আরও তথ্য পান। মিন্টুর দেওয়া এ তথ্য নিশ্চিত করছে ডিবি।
কাজী কামাল আহমেদ বাবু কারাগারে
গতকাল বাবুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান তার বক্তব্য রেকর্ড করার আবেদন করেন। এরপর, বাবু ঘটনার দায় স্বীকার করেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হন। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে বাবুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ডিবির একটি দল। গত ৯ জুন বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে গ্যাস বাবুর নাম এসেছে বলে জানিয়েছে ডিবি। শিমুলের হোয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এমপি আনারকে হত্যার পর খুনিরা তার জামাকাপড় খুলে ফেলে এবং তার ছবিও তোলে। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছিল বাবুকে।
ডিবি জানায়, গ্যাস বাবু ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, আন্না হত্যার মূল হোতাদের সঙ্গে তার একাধিকবার দেখা হয়েছে। শিমুল ভূঁইয়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীনের জন্য কাজ করত। করিম মিন্টুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন গ্যাস বাবু সাইদুল।
ডিবি সূত্র বলছে, সাংসদ আন্না হত্যার পরপরই গ্যাস বাবুর আচরণ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা তার তিনটি মোবাইল ফোন হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এ ব্যাপারে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, তার তিনটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে, তাই তিনি জিডি করেছেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, মিন্টুর অনুরোধে তাকে মোবাইল ফোন সেট দিয়ে থানায় রেখে দিতে বলে।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস বাবু ও সাইদুল করিম মিন্টুকে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
শাহীনকে ছাড়া তদন্ত অসম্পূর্ণ
এমপি আন্না হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহীন আমেরিকায় রয়েছেন। তাকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তির কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আখতারুজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে পুলিশ। আইজিপি ইতোমধ্যে তার মোবাইল ফোন নম্বর, পাসপোর্টসহ তথ্য সংগ্রহ করে ইন্টারপোলকে অবহিত করেছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গোপন পুলিশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তারা।
এ পর্যন্ত চারজন দায়িত্ব নিয়েছেন
এমপি আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজন তাদের দায় স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত দ্বিতীয় আসামি মিন্টু আট দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে গ্রেফতারকৃত সর্বহারা নেতা আনার উল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া গ্যাস বাবুর কাছ থেকে ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় ডিবি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবি সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এখনো কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। হত্যার ঘটনা সম্পর্কে সে কতটুকু জানত, গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোন কেন নিয়েছিল, মিন্টুর প্রতিনিধি শিমুল ভূঁই ঢাকা থেকে আসার পর গ্যাস বাবুর সঙ্গে কেন দেখা করেছিলেন, গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোন নষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন, কেন ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন? এ ছাড়া গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোনে আখতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা হয়েছিল? না, মিন্টুর কাছ থেকে এ ধরনের সব মামলার তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
তদন্তের এ পর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন ইয়া রশিদ বলেছেন, এমপি আন্না হত্যার তদন্ত চলছে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর কাছ থেকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন।
মিন্টুর মুক্তির দাবিতে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা জানান, এমপি আন্না হত্যা মামলায় গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তার অনুসারীরা। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নগরীর আওয়ামী লীগ কার্যালয় এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পায়রা চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে তিনি সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে কালিগঞ্জে যান মিন্টু
22 মে সাংসদ আন্না হত্যাকাণ্ড প্রকাশ পায়। ওই দিনই আনারের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাইদুল করিম মিন্টু। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবু, যিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, এ হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে বিরল। আখতারুজ্জামান শাহীন শুধু এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়, এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।