ব্যাংকিং সূত্র থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. নাসির শাহরিয়ার জাহেদী।

তিনি বলেছিলেন যে সরকার আগামী অর্থবছর 2024-25 এ ব্যাঙ্ক উত্স থেকে 1 লাখ 37 হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই ঋণ নেওয়া হলে এই উৎস থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সরকার এত বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে, যা শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

রোববার (৯ জুন) সংসদে ২০২৩-২৪ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন এমডি। নাসির শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘সরকার ব্যাংকিং উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যায়। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেলে সেখানে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, 2017-18 সালে ব্যাংকিং সূত্র থেকে সরকারের ঋণ ছিল মাত্র 11 হাজার 731 কোটি টাকা। পরের বছর তা ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। কিন্তু কোভিডের ঠিক আগে, 2019-20 আর্থিক বছরে, সরকারকে ব্যাঙ্ক থেকে 72 হাজার 246 কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। ফলস্বরূপ, কোভিড-পরবর্তী আর্থিক বছরে 2022-23-এ সরকারকে ব্যাঙ্কিং উত্স থেকে 1 লাখ 24 হাজার 123 কোটি টাকা ধার করতে হবে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। শুধু 24 জুন মাসেই সরকারকে ব্যাংকিং খাত থেকে 61 হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়েছে।

আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এ গতি চলতে থাকলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ছয় লাখ কোটি টাকা। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের একটু সতর্ক হওয়া দরকার। ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারি ঋণ কমাতে হবে এবং বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাসির শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এতে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায় এবং বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে পারব না। তরুণরা স্বপ্ন না দেখলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে না। তাই সরকারের উচিত বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ বাড়ানো। এটা বাড়াতে সরকারকে ব্যাংকিং উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে।

আয়কর সংগ্রহ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে জাহেদী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে জমিভিত্তিক খাজনা ছিল রাজস্ব আদায়ের প্রধান উপাদান। কিন্তু বর্তমানে ভূমি রাজস্বের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে খুবই কম। কিন্তু এখন রাজস্ব আদায়ের জন্য তহসিল অফিসকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন রাজস্বের বড় অংশ এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। তবে জেলা পর্যায়ে এনবিআর অফিসের তেমন কোনো কর্মকর্তা নেই। আমি মনে করি, জেলা পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত এনবিআরের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

বাজেটে তহবিল বরাদ্দের সমতা সম্পর্কে নাসির শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ২০০৯ সালে প্রণীত সরকারি অর্থ বাজেট ব্যবস্থাপনা আইনে অর্থ বরাদ্দ ও প্রাপ্তির সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাজেট আইনে বলা হয়েছে, সারা দেশে সমান অগ্রগতি ও উন্নয়ন হতে হবে। কিন্তু আমার প্রত্যন্ত জেলা ঝিনাইদহে আমরা এখনো প্রত্যন্ত। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আমার ঝিনাইদহ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একটি বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল নেই। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মনে হচ্ছে আমার ঝিনাইদহ জেলা এগিয়ে যাচ্ছে না। তাই আগামী বাজেটে তহবিল বরাদ্দের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.