গাজীপুর পৌর কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নিউ টাউন নিটওয়্যার কোম্পানির (এনটিকেসি) সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিয়েছেন। 2018 সালে মেয়র হওয়ার পর, তিনি গাজীপুরের কোনাবাড়িতে অবস্থিত এই কোরিয়ান মালিকানাধীন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নেন। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কোম্পানির কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের নামে নেওয়া শত শত কোটি টাকার ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গী সুযোগ খুঁজছেন।
তিনি কোরিয়ান বস লির ব্যবসায় “সুই হিসাবে প্রবেশ করেছিলেন এবং বাজপাখি হয়ে বেরিয়েছিলেন”। ভুয়া ঠিকাদারের কাছ থেকে পুরো কোম্পানি কেড়ে নেওয়া হয়। আর্থিক সংকটে ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাহাঙ্গীর টাকা আত্মসাৎ করেন। এখন কোম্পানি মালিকরা দেশ ছেড়ে রাতের আঁধারে মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে এনটিকেসি। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছিল। পাঁচ হাজারের বেশি কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও মাসের প্রথম সপ্তাহেই বেতন-ভাতা দিত প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মিথ্যা ব্যবসায়ী আনোয়ার চিশতীকে গুলি করে মারার হুমকি দিয়ে মিথ্যার ব্যবসা শুরু করেন।
এর পর 2016 সালে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কোম্পানিটি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এরপর কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল বকেয়া কমতে থাকে।
2018 সালের শুরুতে, কর্মচারীরা তাদের বকেয়া আদায়ের জন্য ধর্মঘটে গিয়েছিলেন। বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় জাহাঙ্গীর শুভাকাঙ্খী হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি তখন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অনেকবার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অগ্রণী ব্যাংক থেকেও প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। 2018 সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জাহাঙ্গীর প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেন। 2021 সালে চার মাসের বকেয়া বেতন পাওয়ার সুযোগ নিয়ে কর্মচারীরা প্রতিবাদ করেছিলেন।
বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য তিনি 100 কোটি রুপি নেন। এরপর জাহাঙ্গীর শ্রমিকদের বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে একটি ফরম নেওয়া হয় যাতে লেখা থাকে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে এবং চার মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অনেক কর্মচারী বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানান। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কর্মচারী এক মাসের বেতন পান। জাহাঙ্গীর ঋণের টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আদনাইর হোসেন চিশতী জাহাঙ্গীরের আগের নিউ টাউন নিটওয়্যার কোম্পানিতে লিভারির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে তারা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেয়। এরপর থানায় গিয়ে মামলা করি। পুলিশ মামলা না নিলে আমি আদালতে মামলা করি। তখন কারখানায় আমার প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা ছিল। আদালত থেকে জিনিসপত্র না সরাতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাহাঙ্গীর সেই পণ্য সরিয়ে দেন। পরে আমাকে কারখানায় যেতে দেওয়া হয়নি। তারা যখন কারখানায় নকল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনে, তখন কারখানাটি কমতে শুরু করে।’
এনটিকেসি ডাইং ইউনিটের প্রাক্তন কর্মকর্তা জিএম বুলবুল বলেন, “২০১৮ সালে কারখানার আর্থিক সংকট শুরু হয়। এ সময় জাহাঙ্গীর আলম হাত তোলেন। যদিও তারা হুমকি থেকে লাভবান হয়েছিল, তারা ধীরে ধীরে কোম্পানিটিকে গ্রাস করেছে। সে সময় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এনটিকেসির পরিচালকের নামে একটি পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলেন, যা প্রতিষ্ঠানের সবাই অবগত ছিলেন।
“চার মাসের বেতন বকেয়া থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির কর্মকর্তারা কারখানাটি আবার চালু করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের কারণে তা হতে পারেনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোম্পানিকে আরও বিপদে ফেলে দেন। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করায় কারখানাটি এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম মিথ্যার ব্যবসা করতেন। পরে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে জাহাঙ্গীর কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মজুরি সম্পর্কে মালিকের সাথে আলোচনা করুন। তাকে বাড়িতে ডেকে ৩০ শতাংশ কর্মচারীকে এক মাসের বেতন দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কারখানার মূল মালিকরা আর দেশে নেই। এখন সবাই কোরিয়ায়। তাজউদ্দীন কারখানা দেখাশোনা করতেন। তাজউদ্দীন জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে কারখানা থেকে রাতের আঁধারে বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হচ্ছে।