গত রবিবার রাতে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। তার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত শনিবার দিল্লি গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
গত রবিবার রাতে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি। তার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত শনিবার দিল্লি গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
গত এক দশকে এই সম্পর্ক দ্রুত বেড়েছে। আমরা আমাদের জনগণকেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বছর নয়াদিল্লি সফরটি সাধারণ আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কারা আমন্ত্রিত ছিলেন তা এক নজরে দেখে নিন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ছাড়াও সেই সব দেশকেও এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাদের ওপর নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের আস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান। দুই দেশের সম্পর্ক ও সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথাও বলেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম ভারতে পা রাখেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সংক্ষিপ্ত সফরের রয়েছে বহুমাত্রিক তাৎপর্য। কূটনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় ‘নরম কূটনীতি’, তা দক্ষতার সঙ্গে করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কারণ এই সম্পর্কের বন্ধন শুধু আবেগের নয়, আধ্যাত্মিকও। সেই বন্ধনও রক্তের।
ভারতের বিশ্বস্ত প্রতিবেশী বাংলাদেশ এক সাগর রক্তের পর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। সেই অর্জনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ভারত। ভারতের সরকার ও জনগণ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে পূর্ণ সমর্থন করেছে। উভয় দেশ একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সাহায্যকে বাংলাদেশের মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের দেশের এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল। খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। দেশের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করে তিনি আবার ভারতের অভ্যন্তরে আশ্রয় নেন।
অর্থনীতির দিকে তাকালে বোঝা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলেই গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। অমীমাংসিত ভূমি সীমানা ও ছিটমহল সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের অবসান হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আসছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতিতে মিল রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ইতিবাচক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী 21 এবং 22 জুন একটি সরকারি সফরে নয়াদিল্লি আসবেন। নরেন্দ্র মোদির নতুন সরকার গঠনের পর এটিই হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। ওই সফরের আগেই ‘নরম কূটনীতি’র কাজ শেষ করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে তার বাসভবনে বিজেপির সিনিয়র নেতা লাল কে আদভানির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে দুই নেতাই তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। অতিরিক্তভাবে, তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আদান-প্রদান ছিল এবং অতীতের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছে, সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই একটি দিক সবসময় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি সম্মান দিতে জানেন। পাঠকদের মনে আছে, বাংলাদেশ সফরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রতি অভদ্র মনোভাব দেখিয়েছিল বিএনপি। এই ঘটনা ভারতের কোনো দলের নয়, রাষ্ট্রের মর্যাদাকে আঘাত করেছে। যদিও রাজ্যে বিএনপির অপমানকে বিজেপি কখনও সহজ চোখে দেখেনি।
অন্যদিকে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের রসায়ন সবারই জানা। ভারতের ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক পরিবারের তিন প্রভাবশালী সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লিতে অবস্থানকালে দেখা করেন। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তার ছেলে রাহুল গান্ধী এবং মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের ছবি ও ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। শেখ হাসিনা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আলিঙ্গন করার উপায় কী প্রমাণ করে? এটা নিছক আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, ছিল সততা, হৃদয়ের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিদের মধ্যে নয়, দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে নয়, একটি দেশ এবং অন্য দেশের মধ্যে সম্পর্ক। এই সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক।
শেখ হাসিনা যেমন ভারতরত্ন লাল কৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তেমনি তিনি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। শেখ হাসিনা বিজেপির আধ্যাত্মিক গুরু এল কে আদভানির সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করেন। এরপর সোনিয়া গান্ধী তার ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে পৌঁছান। নিউজপেপার অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘শেখ হাসিনা এবং গান্ধী পরিবারের সম্পর্কের ইতিহাস তৈরি করেছেন তার পূর্বপুরুষরা। শেখ হাসিনার বাবা, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। 1971 সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে, ইন্দিরা গান্ধীর সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সম্মানের দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তি স্থাপন করেছিল।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদান, দুই নেতার মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে যাওয়া এবং সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার সন্তানদের দেখা- এতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কী অর্জন? এক কথায় উত্তর হল, বিশ্বাস। সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও এটি পারস্পরিক আস্থা নিশ্চিত করেছে। ফোনালাপ, শুভেচ্ছা ও মুখোমুখি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির বার্তা এসেছে। গত সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এটা মেনে নিতে হবে যে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের যেমন ভারতের প্রয়োজন, তেমনি ভারতের প্রয়োজন। জয়ের পর প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এটা দুই নেতার ব্যক্তিগত সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশও বটে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ গ্যালাক্সি নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সরকার একে অপরের ওপর আস্থা রাখবে, আমরাও সেই আস্থা বজায় রাখতে চাই।