পাকিস্তানি দলের দুর্দশার আসল কারণ! (PC-PTI)

পাকিস্তান দলের কথা বলার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা একটু বলি। কারণ শুক্রবার এই দুই দলকে মুখোমুখি হতে হবে। এই বিশ্বকাপে আপসেটের শিকার হয় দক্ষিণ আফ্রিকা দল। নেদারল্যান্ডস তাদের 38 রানে পরাজিত করে। তবে তা ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়-পরাজয়ের পার্থক্যটাও মনে রাখুন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১০২ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে ১৩৪ রানে। নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৯ রানে জয় পায় তারা। এরপর পঞ্চম ম্যাচে ১৪৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে, দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টানা ওয়ানডে সিরিজ 100 রানের ব্যবধানে জিতেছিল। জয়-পরাজয়ের এই পার্থক্য পাকিস্তানের জন্য ভীতিকর। টানা তিন ম্যাচে হেরেছে পাকিস্তান দল। পাকিস্তানি অনুসারীরা ক্ষুব্ধ। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং এই তিন বিভাগেই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার দলের প্রস্তুতিকে উন্মোচিত করেছে। কিন্তু এই ট্র্যাজেডির দায় শুধু পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের নয়, অসময়ে ও অর্থহীন রাজনীতির ওপরও বর্তায় যার দায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের।

পাকিস্তান দলের উপর ক্রিকেট বোর্ডের রাজনীতির প্রভাব

গত কয়েক মাসে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে ধারাবাহিক পরিবর্তন হচ্ছে। রমিজ রাজা, নাজাম শেঠি ও জাকা আশরাফ সভাপতির দায়িত্ব নেন। এই তিনজনের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তাদের পছন্দেও দৃশ্যমান ছিল। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আগেও ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড অর্থাৎ বিসিসিআই নিয়ে দ্বিধায় ছিল, কিন্তু এবার এশিয়া কাপ দিয়ে গল্প শুরু হয়েছে। এশিয়া কাপের আয়োজক পাকিস্তান। তবে ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা পাকিস্তানে যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারত তার সমস্ত ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় খেলেছে এবং দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু এ সময় পাকিস্তান বোর্ডের নেতারা এমনও হুমকি দেন যে, ভারত যদি এশিয়া কাপ খেলতে না আসে, তাহলে তারা বিশ্বকাপও খেলতে আসবে না। এরপর জাকা আশরাফ যখন দায়িত্ব নেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে তিনি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে যৌথভাবে এশিয়া কাপ আয়োজনের পক্ষে নন তবে সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে তাই তিনি তা মেনে নেবেন। বুঝতে হবে বোর্ডের রাজনীতি করলেও খেলোয়াড়দের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে না। কিন্তু পরোক্ষভাবে এটা খেলোয়াড়দের অনেক পার্থক্য করে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল তারা জানে না তাদের ভবিষ্যত নিরাপদ কি না।

সে সময় বিশ্বকাপ নিয়েও অনেক বিভ্রান্তি ছিল।

এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপ নিয়েও দ্বিধায় ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। যা শুরু হয়েছে ম্যাচের সূচি প্রকাশের পর। চেন্নাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল পিসিবি। যার আতঙ্ক বসত খেলোয়াড়দের মনে। ফলাফল সবার সামনেই থাকবে। পাকিস্তানকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তানি সমর্থকরা না আসলেও হৈচৈ হয়েছিল। এক দফা অভিযোগ ছিল। এর আগে হায়দ্রাবাদে পাকিস্তান দলের সমর্থনে স্লোগান উঠলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কোনো আপত্তি ছিল না। বাবর আজম যখন ভারতের আয়োজকতার প্রশংসা করেছেন, তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু মাঠ থেকে পাকিস্তানি অনুসারীদের অনুপস্থিতিকে অযথা অতিরঞ্জিত করা হয়েছিল। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিষয়ে রাজনীতি করেছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সম্ভবত ভুলবে না যে 2004 সালে, যখন ভারত 14 বছর পর পাকিস্তান সফর করেছিল, তখন ভারতীয় টিভি ক্যামেরাম্যানদের ভিসা দেওয়া হয়নি। ভিসা যেকোনো দেশের কূটনৈতিক বিষয়ের আওতায় আসে। পাকিস্তানি সমর্থক থাকলে মজা হত কিন্তু বাবর আজমের দলের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, গেমাররা প্রতিদিন সব ধরণের রিপোর্ট এবং বিতর্ক সম্পর্কে সচেতন। আগেকার খেলোয়াড়রা বড় ম্যাচের আগে টিভি দেখা ও খবরের কাগজ পড়া বন্ধ করে দিত। কিন্তু এখন ফোন পাশে রাখা অসম্ভব। এমতাবস্থায় এই পুরো বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যে রাজনীতি করেছে তা তাদের দলে খারাপ প্রভাব ফেলেছে।

সামনের রাস্তা পাকিস্তানের জন্য খুব কঠিন হতে পারে

আফগানিস্তানের কাছে হারের পর বিশ্বকাপে এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের। আগামী কয়েক ঘণ্টা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খুব শক্তিশালী দল বলে মনে হচ্ছে। আসল সমস্যা হল দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও পাকিস্তানও বড় দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর আরও ৩টি ম্যাচ খেলতে হবে পাকিস্তানকে। যা বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের দিকে। বাংলাদেশই একমাত্র দল যাকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল বলা যায়। অন্যথায় ইংল্যান্ড দল নিশ্চিতভাবেই পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। নিউজিল্যান্ড দলকে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল মনে হচ্ছে। যে কারণে তাকে বিশ্বকাপের বড় প্রতিযোগীদের মধ্যেও গণ্য করা হচ্ছে। বিশ্বকাপের পরের সমীকরণ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজমকে অপসারণের দাবি জোরালো হচ্ছে। আরও কিছু খেলোয়াড়কেও লঞ্চ করা হবে। কিন্তু সত্য হল এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায়ী পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের রাজনীতি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.