পরিবেশের সঙ্গে সহাবস্থান নয়, পরিবেশ ধ্বংসের মাধ্যমে দেশে নগরায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ক্রমাগত দখল ও দূষণের কারণে শহরগুলোর সবুজ ও জলজ অংশ হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক ও বিনোদনের সুযোগ হারাচ্ছে। একসময়ের ছিমছাম বাগান ও উদ্যান, খাল-বিল, হ্রদ ও পুকুরে সবুজ-শ্যামল এই শহরগুলো আর বসবাসের উপযোগী নয়।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘টেকসই নগরায়ণে পরিবেশের গুরুত্ব পর্যালোচনা ও সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ অবস্থার পরিবর্তনে ৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে গাছ কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শহরাঞ্চলের পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে গাছ শুমারি করে গাছ সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরি করে।
বন ও বনভূমি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক বন রক্ষায় সাম্প্রতিক সরকারি পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বিপিএর সহ-সভাপতি মাহিদুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম, বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিপিএ যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, হাসান ইউসুফ খান ও হুমায়ুন কবির সুমন, বিপিএ নির্বাহী কমিটির সদস্য জাবেদ জাহান ও পারভীন আখতার, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, হাজী আনসার আলী ও নাজিম উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে মাহিদুল হক খান বলেন, সরকার দেশের পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতির কথা উচ্চস্বরে বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। আমি প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিবেশ ধ্বংস হতে দেখছি। দেশের পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পরিবেশমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডাঃ. ইশরাত ইসলাম বলেন, নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আমাদের প্রথমে পার্ক এবং মাঠের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। দুটোই এক জিনিস নয়। কিছু মানুষ একটি মাঠ এবং একটি পার্ক মধ্যে পার্থক্য বুঝতে চান না. তিনি দেশের ড্যাপ ও উপজেলা মাস্টার প্ল্যানের যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
দূষণ রোধে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শিশুরা জন্মের আগেই বায়ু দূষণের শিকার হয়। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন পরিবেশ শাসন। নির্মাণ কাজের সময় ব্যাপক হারে বায়ু দূষণ হয়, তা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং বিকল্প ইটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। অযোগ্য যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আলমগীর কবির বলেন, দেশের শহরগুলোকে সুন্দর করতে হলে সবার আগে দেশের নেতাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দেশের পরিবেশ রক্ষা করা যায়। ঢাকাসহ সব খেলার মাঠ ও পার্ক দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।