বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা নিয়মিত মাত্র চারটি দেশে যাচ্ছেন। এই দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও কাতার। এর আগে একটানা ছয়টি দেশে শ্রমিক যাচ্ছিল। ওমান এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে উভয় দেশেই পতন হয়েছে।
খুব কম শ্রমিকই অন্য দেশে যায়। এদিকে, বুধবার ঢাকার ওমান দূতাবাস ওমানে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
এমতাবস্থায় জনশক্তি রপ্তানি খাতে ধস নেমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। তিনি বলেন, নতুন শ্রমবাজার চালু না হলে জনশক্তি রপ্তানি খাত ধস নামবে।
গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর কর্মচারীর সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো হয় ১৬৮টি দেশে। পরিসংখ্যান দেখায় যে নামমাত্র কর্মচারীরা 162টি দেশে ভ্রমণ করে।
এ বছর কর্মীদের ছাঁটাইয়ের হার কমেছে
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩ লাখ ২২ হাজার ২৩৭ জন কর্মী চাকরির জন্য বিদেশে গেছেন।
এর মধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৬ জন শ্রমিক। কুয়েত, কাতার, লেবানন, জর্ডান, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে গেছেন ৫৮ হাজার ৪২০ জন শ্রমিক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ৯০০ কর্মী গেছেন সিঙ্গাপুর ও কাতারে। ২৩ হাজার ৩১ জন শ্রমিক ওমান, লিবিয়া, সুদান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান, মরিশাসসহ ১৫২টি দেশে গেছেন।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম চার মাসে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ জন কর্মী বিদেশে গেছেন এবং ২০২৩ সালের একই সময়ে ৪ লাখ ১ হাজার ৮৪৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
বিএমইটি থেকে প্রাপ্ত এই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে 2022 সালের এই সময়ের তুলনায় 2024 সালের এই সময়ের মধ্যে 1 লাখ চার হাজার 321 জন কর্মচারী হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে, 2023 সালের তুলনায় 2024 সালে 79 হাজার 606 কর্মী কমানো হয়েছে।
তিনটি শ্রমবাজারে শ্রমিক বেড়েছে: বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার হারে সৌদি আরব প্রথম অবস্থানে রয়েছে। 1976 থেকে 2023 সাল পর্যন্ত 57 লাখ 78 হাজার 634 জন শ্রমিক চাকরির জন্য সে দেশে গেছে। যা মূল কর্মসংস্থানের ৩৫.৯৫ শতাংশ। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এ শ্রমবাজারে গেছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৬৭ জন। যা 2022 সালের প্রথম চার মাসে চলে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যার তুলনায় 36.75 শতাংশ কম। কিন্তু ২০২৩ সালের তুলনায় ৭.৪২ শতাংশ বেশি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি শ্রমিকদের পরেই দ্বিতীয়। BMET ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে 2022 সালের তুলনায় 2024 সালে 25 হাজার 339 জন এবং 2023 সালের তুলনায় 2024 সালে 2 হাজার 877 জন কর্মী রয়েছে।
সিঙ্গাপুরে শ্রমিক অভিবাসনের হার কমলেও কাতারে শ্রমিক অভিবাসনের হার বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সিঙ্গাপুরে গেছেন ১৪ হাজার ৯৬৪ জন। কাতারে গেছেন ২৪ হাজার ৯৩৬ জন। BMET-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে 2022 সালের তুলনায় 2024 সালে সিঙ্গাপুরে 3,642 কম কর্মী থাকবে। 2023 সালের তুলনায় 2024 সালে 1,283 কম কর্মী সিঙ্গাপুরে চলে গেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আরও ১৮ হাজার ৬৯৫ কর্মী কাতারে গেছেন। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আরও ১৬ হাজার ৬৪৫ কর্মী কাতারে গেছেন।
নতুন শ্রমবাজার নেই
2018 সালে, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো 53টি সম্ভাব্য নতুন দেশের শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণা করেছে। তবে পাঁচ বছর পার হলেও নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন সম্ভাবনাময় বাজারগুলোকে কাজে লাগাতে না পারলে দেশের অভিবাসন খাত বড় ধরনের বিপদে পড়বে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, আমাদের দূতাবাসগুলোকে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তিনি গতকাল কণ্ঠকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে ভিন্ন চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা গত 20 থেকে 25 বছর ধরে এভাবে শ্রমিক পাঠাচ্ছি। আমাদের দূতাবাসগুলোকে নতুন শ্রমবাজার খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
অভিবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘অভিবাসন একটি জটিল বিষয়। আমরা বর্তমানে জর্ডান, মরিশাস এবং মাল্টার সাথে কাজ করছি। রাশিয়ায়ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে।
শ্রমবাজারের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, দুবাই শ্রমবাজার থেকে তিন হাজার শ্রমিকের চাহিদা এসেছে। এর মধ্যে ৪০০ শ্রমিক চলে গেছেন। 500 শ্রমিক যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ওমানে অবৈধভাবে বসবাসরত ৯৬ হাজার শ্রমিককে বৈধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটির সরকার।