মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোনো আসামিকে নিন্দা কক্ষে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছে আদালত। সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রুলের শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এসএম শাহজাহানের বিশেষজ্ঞ মতামত নেন আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেল এ. রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এম আমিন উদ্দিন। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিধিমালার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত ঝুলে রাখা হয়।
চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা কারাগারের তিনজন বন্দি ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত করার আগে দণ্ডিত বা দণ্ডিতদের কনডম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন। তারা হলেন- সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সুনামগঞ্জের আবদুল বশির ও খাগড়াছড়ির শাহ আলম। ওই রিটের শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট একটি রায় দেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত করার আগে কনডম সেলে আসামিদের আটকে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কনডম কোষে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আটকে রাখার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির বিধানগুলি কেন হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে অসাংবিধানিক ঘোষণা? এছাড়া কনডম সেলে রাখা বন্দীদের কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তারও রিপোর্ট চায় আদালত।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন লাগে। ফৌজদারি কার্যবিধির 410 ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বিচার আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি আপিল বিভাগে আপিল করতে পারেন।
আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে বা দোষী প্রযোজ্য না হলে সরকার মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। কিন্তু বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের পরপরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কন্ডেনেশন চেম্বারে রাখা হয়।
রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কোনো আইনগত বিধান নেই। এ জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের অনুমোদন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের সুযোগ রয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলি সম্পূর্ণ হতে 10-12 বছর সময় লাগে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডম সেলে রাখা হয়। যদিও পরে অনেকের শাস্তি কমানো হয়েছে। অনেকে খালাস পান। রুল শুনানি শেষে রায়ের অপেক্ষায় ছিল।