একত্রিত ছবি


বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে বিএনপির জন্ম। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এখন তারা গণতন্ত্র রক্ষা করবে। নির্বাচন তাদের চিন্তার বিষয় নয়। তারা আবারও জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের উদ্যোগে এক ছাত্র সভার আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা সরকারের ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন এবং সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব পালনের জন্য ছাত্র লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে যাদের জন্ম; জাতির পিতাকে নিজ পরিবারে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতা দখলকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা সৃষ্ট বিএনপি কখনোই এদেশের কল্যাণ চাইবে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।

ছাত্রলীগের যুবশক্তি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নৈশপ্রহরীর মতো সদা সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার ছাত্রলীগের সন্তানেরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের কর্ণধার হবে, আমি আপনাদের কাছে এটাই চাই। এটা শুধু 2041 সালেই থেমে থাকবে না, আমরা 2100 সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ছাত্র লীগকে সর্বদা প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একটি শিক্ষা পেতে. শিক্ষার মূলনীতি, শান্তি, অগ্রগতি, ছাত্র লীগ। ছাত্র লীগের সেই নীতি অনুসরণ করা উচিত।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের তরুণদের শক্তিই একদিন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেকোনো দুর্যোগে ছাত্র লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জনগণকে মনে করিয়ে দেবে যে তারা ভোট দিতে আসে না, ভোট চায় না, ভোট পায় না। তারা ভোট পাবে না। কারণ তারা ডাকাত, চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়, মানুষের টাকা কেড়ে নেয়।

হিলারিকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের পদ দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেন ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যাংকের এমডিও একজন সরকারি বেতনভোগী ব্যক্তি। আইন অনুসারে, আপনি 60 বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারেন, তবে তার বেশি নয়। 10 বছর বেআইনি গাড়ি চালানোর পরও বারবার সেখানে যাওয়ার প্রলোভনে আমাদের চাপ দেওয়া হয়। এত বড় দেশ, তারাও আমাদের ওপর বারবার চাপ দেয়। তিনি বলেন, এমডির পদ না রাখলে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই ভদ্রলোক (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। কিন্তু আদালত তার বয়স কমাতে পারেনি। তিনি মামলায় হেরে যান। এরপর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হন তার বিদেশি বন্ধু হিলারি ক্লিনটন। জোয়েলিকের সঙ্গে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমি বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব, কারও কাছে সাহায্য চাইব না। আমরা তা করেছি। এটা করে আমি বিশ্বকে দেখিয়েছি যে বাংলাদেশ এটা করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ এটা করতে পারে। এরপর বদলে গেছে বাংলাদেশের চিত্র।

যারা উন্নতি দেখতে পাচ্ছেন না তারা চক্ষু ইনস্টিটিউটে চোখ পরীক্ষা করাতে পারেন

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমালোচকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের একটা অংশ আছে যারা কোনো কিছু পছন্দ করে না। তারা দেশের উন্নয়নের কিছুই দেখছে না। যারা অন্ধ এবং আমাদের উন্নয়ন দেখেন না, তাদের চোখ দেখানোর জন্য আই ইনস্টিটিউট থেকে 10 টাকার টিকিট কিনতে বলব। প্রকৃতপক্ষে, অন্ধকার তাদের মনের দরজায়। তারা পরাজিত শক্তি। এ কারণে তারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন দেখছেন না। বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন তার পছন্দ নয়। তারা বিল্ডিং খুলে বিশুদ্ধ বাতাস পেতে না পারায় দুঃখিত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কিছু মানুষ স্বাধীনতা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। সময় দেওয়া হয়নি। এক শ্রেণি ধ্বংসাত্মক কাজ করছিল। লুটপাট, থানায় অগ্নিসংযোগ—এসব কিছু লোক করছিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “স্বাধীনতার পর নগদ টাকা দিয়ে যে খাবার কিনেছিলাম তা না দিয়ে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করা হয়েছে। এটা মাথায় রেখেই আমরা আমাদের খাবার তৈরি করব। আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। আমাদের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

তরুণদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শিশুদের বলবো আপনারা উদ্যোক্তা হতে পারেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, সারা বাংলাদেশে ওয়াই-ফাই সংযোগ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ চালু হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আমাদের শিশুরা ঘরে বসে শিখে আয় করতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি পড়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সঠিক নেতৃত্বে নিজেদের গড়ে তুলবে। আমরা চাই চাকরি, ব্যবসা যেখানেই তারা কাজ করে, তারা যেন সঠিক নেতৃত্ব পায়।

সার্বজনীন পেনশন নিয়ে ছড়ানো বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে ছাত্র লীগকে কাজ করতে হবে

শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা সার্বজনীন পেনশন চালু করেছি। দেখলাম, বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেছেন, এটা আমাদের নির্বাচনী তহবিল তৈরি করতে। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না, জনগণকে কিছু দিতে পারে না, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করছি এমন একটা বিভ্রম তৈরি করছে। এই বিভ্রান্তিতে কেউ কান দেবেন না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে, অনুর্বর জমিতে চাষাবাদ ও গাছ লাগানোর জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

ছাত্র লীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিকাল ৩টায় স্মরণসভা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে দুপুরের আগেই সভাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীরা বাস ও ট্রেনে ঢাকায় আসেন। বেলা ৩টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্মরণসভা শুরু হয়। ছাত্রলীগের শিল্পীরা জাতীয় সঙ্গীত, দলীয় সঙ্গীতসহ অন্যান্য গান পরিবেশন করেন। এ সময় ছাত্রলীগের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরন্তর উন্নয়নে লড়াই করার জন্য উপস্থিত নেতা-কর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান।

স্মরণসভায় অংশ নিতে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন। বিকেলে শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়ক মিছিলে ভরে যায়। দুপুর নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাস্থলও ভরে যায়। আয়োজকদের দাবি, গতকালের শ্রদ্ধা সভায় পাঁচ লাখের বেশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র চলছে: ওবায়দুল কাদের

স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদির বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন আমরা ভুলিনি। আবারও অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বাংলার মাটিতে সেই অস্বাভাবিক সরকারকে থাকতে দেব না।

তিনি বলেন, ‘দেশ-বিদেশে আজ কত ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র! তারা জানে এদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নির্বাচনে আমাদের হারাতে পারবে না। তারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। ‘নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নীতি বাস্তবায়ন করতে চাই।’

শামীম উসমানের নির্দেশে সমাবেশে ৩০ হাজার নেতা-কর্মী

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম উসমানের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের প্রায় ৩০ লাখ নেতা-কর্মী ৩০০ বাসে ঢাকায় ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশে যোগ দেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও সংসদ সদস্য শামীম উসমান ও তার ছেলে অয়ন উসমানের নির্দেশে ঢাকার সমাবেশে আমরা উপস্থিত ছিলাম।

Nitya Sundar Jana is one of the Co-Founder and Writer at BongDunia. He has worked with mainstream media for the last 5 years. He has a degree of B.A from the West Bengal State University.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.