নিখোঁজদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিটি মামলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শোনা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বিকেলে ‘আন্তর্জাতিক নিখোঁজ সপ্তাহ’ উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রসঙ্গে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন।
ফখরুল বলেন, ‘২০০৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে গুম হওয়ার ঘটনা বন্ধ করতে এবং নিখোঁজদের ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দিতে এবং তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আমি মনে করি ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের প্রতি আইনি ও নৈতিক সমর্থন শুরু করা এবং নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘ডামি আওয়ামী সরকার বিভিন্ন মতের মানুষকে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অমানবিক কর্মসূচি চালিয়ে ক্ষমতায় আছে। বিভক্ত সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষকে স্তব্ধ করতে একের পর এক কালো আইন করা হয়েছে। এ কারণে তারা জোরপূর্বক গুমকে অস্ত্র দিয়ে দেশকে ভীতিকর শহরে পরিণত করেছে।
ডামি সরকার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ধরে রাখতে ঘামের মতো অমানবিক উপায়ে বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। মানুষ গভীর উদ্বেগ, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ‘নিখোঁজ মানবতাবিরোধী।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একদলীয় স্বৈরাচারী সরকার গুমকে তাদের পাশের কাঁটা সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কাউকে নিখোঁজ করা আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বৈরাচারের পতাকাবাহী আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের আর্তনাদে আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নিখোঁজ হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র প্রতিবাদ জানালেও আওয়ামী সরকার কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করছে না।
একদিকে সমাজ ও রাজনীতিতে মাফিয়াদের উত্থান, অন্যদিকে জোরপূর্বক গুমের আশঙ্কায় গণতান্ত্রিক মানুষ দিনরাত উদ্বিগ্ন থাকে। লোকটি সবার দৃষ্টির আড়ালে নিখোঁজ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আন্তর্জাতিক ফোরামে তার নিখোঁজের বিষয়টি নির্লজ্জভাবে অস্বীকার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। কারণ নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিখোঁজ সপ্তাহ উপলক্ষে আমরা আবারো বলতে চাই এম. ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ আরো অনেক নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। সাথে সাথে ফিরে এলো। আমি মনে করি ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের প্রতি আইনি ও নৈতিক সমর্থন শুরু করা এবং নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও মে মাসের শেষ সপ্তাহটি আন্তর্জাতিক নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্মরণ সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মতে, 2009 থেকে 2024 সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় 666 জন নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেছে, কেউ দীর্ঘদিন পর গ্রেফতার হয়েছে এবং অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারের কাছে গুমের ঘটনা বন্ধ করার আহ্বান জানাই এবং নিখোঁজদের পরিবারকে অবহিত ও সহায়তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি ফিরে আসার নির্দেশ। , আমরা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নিখোঁজ ব্যক্তি ও পরিবারের সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।